১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও যুদ্ধাপরাধে দোযী সাব্যস্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (জামাত নামেই যা পরিচিত) নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির শাস্তি মকুব করল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মত ভাবে এই রায় ঘোষণা করেছে।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ— অন্য কোনও মামলা না থাকলে জেলবন্দি আজহারুলকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের অগস্টে রাজধানী ঢাকার মগবাজারের বাড়ি থেকে আজহারুলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির শাস্তি দিয়েছিল তাঁকে। রাজাকার ঘাতকবাহিনীর নেতা হিসেবে পাক সেনার সহযোগী হয়ে রংপুর গণহত্যা, গণধর্ষণ-সহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
ট্রাইব্যুনালের ওই রায়কে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আজহারুল চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তা খারিজ হয়ে যায়। এর পরে ২০২০ সালে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে শীর্ষ আদালতের উচ্চতর বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছিলেন রাজাকার বাহিনীর প্রাক্তন নেতা। প্রধান বিচারপতির রেফাতের বেঞ্চ মঙ্গলবার জানিয়েছে, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে আজহারুলকে ‘নির্দোষ’ ঘোষণা করা হচ্ছে। খারিজ করা হচ্ছে আপিল বিভাগের রায়।
অন্য দিকে, জামাতের প্রধান (আমির) শফিকুর রহমান মঙ্গলবার আজহারুলের মুক্তির প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের কোনও আচরণে, কোনও ভূমিকায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। মানুষ আমরা, কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নই। দল হিসেবে আমরা দাবি করি না যে, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে।’’ এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধপর্বে জামাত নেতা-কর্মীদের একাংশের অপরাধের কথা স্বীকার করলেন বলেই অনেকে মন করছেন। প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে শফিকুর মুক্তিযুদ্ধে জামাতের পাক-সহযোগীর ভূমিকার সাফাই দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম ভারতের আনুকূল্যে দেশ স্বাধীন না হোক। আমরা চেয়েছিলাম ভোটের অধিকার আনতে পাকিস্তানিদের বাধ্য করা হোক।” জামায়াত প্রধানের বক্তব্য, এটি তাঁদের নীতিগত অবস্থান ছিল। এর পরেও যদি কাজ না হত, তবে প্রয়োজনে গেরিলাযুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করার পক্ষপাতী ছিলেন তাঁরা।