Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Israel-Hamas Conflict

একের পর এক বন্দি-মৃত্যু, ঘরেও চাপে নেতানিয়াহু

সম্প্রতি গাজ়ার শেজাইয়া অঞ্চলে যুদ্ধ চলাকালীন আইডিএফ ভুল করে তিন ইজ়রায়েলি বন্দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয়। তিন জনেরই মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, ২৫, ২৬ ও ২৮ বছর বয়সি তিন যুবক সাদা পতাকা দেখিয়েছিলেন।

ইজ়রায়েলের বন্দি অ্যালন লুলু শামরিজ়ের শেষকৃত্যে তাঁর পরিবার-পরিজন।

ইজ়রায়েলের বন্দি অ্যালন লুলু শামরিজ়ের শেষকৃত্যে তাঁর পরিবার-পরিজন। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২৬
Share: Save:

ঘরে-বাইরে ক্রমশই চাপ বাড়ছে ইজ়রায়েল সরকারের উপর। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তবু এককাট্টা। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ হবে না। ক্ষুব্ধ দেশবাসী পথে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, দরকারে সমঝোতা করতে হবে, কিন্তু হামাসের হাতে বন্দিদের ফিরিয়ে আনতেই হবে।

ক্ষোভ আরও বেড়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)-এর গুলিতে তিন বন্দির মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে। সম্প্রতি গাজ়ার শেজাইয়া অঞ্চলে যুদ্ধ চলাকালীন আইডিএফ ভুল করে তিন ইজ়রায়েলি বন্দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয়। তিন জনেরই মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, ২৫, ২৬ ও ২৮ বছর বয়সি তিন যুবক সাদা পতাকা দেখিয়েছিলেন। হিব্রুতে সাহায্য চাইছিলেন বাহিনীর কাছে। তার পরেও তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল আইডিএফ। এ ঘটনার জন্য নেতানিয়াহু দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলেও সে সব শুনতে নারাজ সাধারণ মানুষ। এখনও শতাধিক ইজ়রায়েলি গাজ়ায় হামাসের হাতে বন্দি রয়েছেন। তাঁদের বাড়ির লোকজন আতঙ্কে। ভয়, তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গেও এটাই হতে চলেছে।

আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, গাজ়া শহরের শেজাইয়া অঞ্চলে যুদ্ধ চলার সময়ে ভুলবশত ওই তিন বন্দিকে ‘বিপজ্জনক’ মনে করেছিল সেনারা। তার জেরেই এই ঘটনা। সেনাবাহিনীর অন্য এক কর্তা বলেন, ‘‘তিন বন্দির গায়েই জামাকাপড় ছিল না। হাতে একটা লাঠি ছিল, তাতে সাদা কাপড় জড়ানো। এক জন সেনার কোনও কারণে বিপজ্জনক লেগেছিল। তিনি গুলি চালিয়ে দেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দু’জন সঙ্গে সঙ্গেই প্রাণ হারান। অন্য এক জন পালিয়ে একটি বাড়ির মধ্যে আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই তৃতীয় জনকে নিশানা করে ফের গুলি চালানো হয়। তিনিও মারা যান।’’ ওই কর্তার কথায়, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। ওই দিনটাই আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু বাহিনীরও উপায় নেই। ওই অঞ্চলে হামাস ও বাহিনীর মধ্যে প্রবল গতিতে সম্মুখ-সমর চলছে।’’

হামাসের হাতে বন্দি ইজ়রায়েলিদের পরিবারেরা একটি ফোরাম তৈরি করেছে। নাম ‘হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম’। সংগঠনটি তেল আভিভে একটি সমাবেশের আয়োজন করেছিল। তাতে উপস্থিত ছিলেন নোয়াম পেরি। তাঁর বাবা হেম পেরি হামাসের ডেরায় বন্দি। নোয়াম বলেন, ‘‘বারবার এটাই ঘটছে। আমরা শুধু মৃত অবস্থায় বন্দিদের ফেরত পাচ্ছি। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাই না। যেটা করছি, সেটা যে কারও বাবা বন্দি থাকলে, তাই করত। আমাদের কথাও একটু ভাবুক সরকার। সমঝোতার চেষ্টা করুক। পরিস্থিতি সামলাতে একটি যথাযথ পরিকল্পনা নিক।’’

৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়ে ২৫০ জনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হামাস। এর মধ্যে বহু বিদেশিও ছিল। একশোর বেশি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। কিন্তু তাতেও এখনও ১২৯ জন বন্দি রয়েছেন। যেমন ১৯ বছর বয়সি ইটাই চেন। তাঁর বাবা রুবি চেন বলেন, ‘‘আমাদের মনে হচ্ছে, কোনও রুশ গেমখেলা হচ্ছে। সব সময় মনের মধ্যে আতঙ্ক, এ বারে কার মৃত্যু সংবাদ আসবে।’’ ইজ়রায়েল আগেই ৮ জন বন্দির মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল। আরও ৩ জন প্রাণ হারাল।

নেতানিয়াহু এ সব শুনতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, কোনও যুক্তিতেই সামরিক অভিযান বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘‘আমার মন ভেঙে যাচ্ছে। দেশের মন ভেঙে গিয়েছে। আমরা গভীর ভাবে ব্যথিত। কিন্তু এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই: অপহৃতদের দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়, দুই ক্ষেত্রের জন্যই সামরিক চাপ জরুরি। এই চাপে রেখেই সমঝোতার রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। আমি সেই পরামর্শই দিচ্ছি সরকারের প্রতিনিধি দলকে, যারা আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Benjamin Netanyahu israel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE