E-Paper

ফিরতে মরিয়া ‘নিখোঁজ’ নেতা, চাপে বিএনপি

নির্বাচনের কয়েক মাস আগে শিলং আদালতের নির্দেশে সন্তোষ প্রকাশ করে সালাহউদ্দিনকে অবিলম্বে দেশে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে ‘আর্জি’ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৭
BNP leader Salauddin Ahmed

সালাহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল চিত্র।

ঠিক আট বছর আগের ১০ মার্চে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে এক দল লোক ঢাকার উত্তরার বাড়ি থেকে তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তার ৬৩ দিন পরে গুরুতর অসুস্থ ও আংশিক স্মৃতিভ্রংশ অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায় সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের শিলং শহরে। সেই সময়ে তিনি ছিলেন সাংগঠনিক ক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব।

সেই সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশ এবং সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছিল মেঘালয় সরকার। এর পরে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার শেষে সম্প্রতি তাঁকে বেকসুর রায় দিয়ে দ্রুত দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে শিলং জজ আদালতের আপিল বিভাগ। সোমবার শিলং থ‌েকে সালাহউদ্দিন ফোনে আনন্দবাজারকে জানালেন, “এখনই আমি দেশে ফিরতে চাই। আদালত শিলংয়ের পুলিশ সুপারের কাছে নির্দেশনামা পাঠিয়ে দিয়েছে। ভারত সরকারের মনোভাবও ইতিবাচক। তারা একটা ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট তৈরি করে দিলে মনে হয় না ফিরতে কোনও অসুবিধা হবে।”

নির্বাচনের কয়েক মাস আগে শিলং আদালতের নির্দেশে সন্তোষ প্রকাশ করে সালাহউদ্দিনকে অবিলম্বে দেশে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে ‘আর্জি’ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দিল্লি থেকে ফিরে প্রশ্নের জবাবে বলেন, “সালাহউদ্দিনের ফিরতে বাধা নেই।” কিন্তু আট বছর ভারত সরকারের ‘আতিথ্যে’ কাটানো এই শীর্ষ নেতাকে নিয়ে ধন্দে পড়েছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। সালাহউদ্দিন এখনও বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক স্থায়ী কমিটির সদস্য। আমলার চাকরি ছেড়ে ২০০১-এ কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি খালেদা জিয়া সরকারের যোগাযোগ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হন। তার আগে ছিলেন খালেদার আপ্তসহায়ক। সরকার থেকে বিএনপি সরে যাওয়ার পরে নেতৃত্বে তাঁর উল্কার উত্থান। শীর্ষ নেতারা কারাগারে থাকার সময়ে তিনি কার্যত আত্মগোপন করে দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। যুগ্ম মহাসচিব থেকে মহাসচিবের পদে উত্তরণ যখন প্রায় নিশ্চিত, সেই সময়েই এক মধ্যরাতে করাঘাত তাঁর বাড়ির দরজায়।

তবে শিলং আদালতের রায়ের অব্যবহিত আগে থেকেই স্থায়ী কমিটির সাপ্তাহিক বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নিচ্ছিলেন সালাহউদ্দিন। কিন্তু বিএনপির প্রেস বিবৃতিতে তাঁর উপস্থিতি দেখানো হচ্ছিল না, যা থেকে তাঁকে নিয়ে দলের দোলাচল স্পষ্ট হয়েছিল। স্থায়ী কমিটির নেতারাও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। সোমবার সালাহউদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি অনেক দিন ধরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নিচ্ছি। আজও বৈঠক আছে, থাকব। কারও কিছু বলার আছে?”

২০১৮-র ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হওয়া কোনও নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেছ‌ে বিএনপি। তবে এ নিয়ে দলে মতভেদ রয়েছে। একাংশ মনে করেন, এই সিদ্ধান্তে দল গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আগের বার একই দোলাচলের সময়ে সালাহউদ্দিন বয়কটের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছিলেন। যদিও এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বলেন, “দলের অবস্থানই আমার সিদ্ধান্ত। এটাই শেষ কথা। আপাতত আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

bnp meghalaya Salauddin Ahmed

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy