Advertisement
E-Paper

চিনের পাঁচিলও ছোট হয়ে যাচ্ছে?

পাঁচিল। তবে, যেমন-তেমন পাঁচিল নয়। কারণ, তার মতো দীর্ঘ পাঁচিল এ ভুবনে নেই। পাহাড় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত এমনই বিস্তার যে মহাকাশ থেকে মনুষ্য-নির্মিত নির্দশন হিসেবে একমাত্র এই পাঁচিলকেই দেখা যায়।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ১৫:৫৪
ছবি: টুইটার।

ছবি: টুইটার।

পাঁচিল। তবে, যেমন-তেমন পাঁচিল নয়। কারণ, তার মতো দীর্ঘ পাঁচিল এ ভুবনে নেই। পাহাড় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত এমনই বিস্তার যে মহাকাশ থেকে মনুষ্য-নির্মিত নির্দশন হিসেবে একমাত্র এই পাঁচিলকেই দেখা যায়। ১৯৮৭-এ এই পাঁচিলকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করে ইউনেস্কো। সেই চিনের পাঁচিল কি না ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে! আশ্চর্য হবেন না, খবর তেমনই।

চিনের পাঁচিল যেমন বড়, তেমনই প্রাচীন। ২২১-২০৬ খ্রিষ্টপূর্বে চিনে তখন কুইন সাম্রাজ্য। সেই সময়ে এই পাঁচিল তৈরি শুরু হয়। সমতলে ইট আর পাহাড়ি অঞ্চলে পাথরের ব্যবহার করে পাঁচিল তৈরির কাজ চলে। পাঁচিল তৈরিতে হাজার হাজার কর্মচারী, সৈনিক আর বন্দিদের কাজে লাগানো হয়েছিল। মিশরের পিরামিডের মতোই বিপুল কর্মযজ্ঞ। অতি কষ্টকর কাজ। তার উপরে মাঝেমধ্যেই আক্রমণ হত। তীব্র পরিশ্রমে অনেক শ্রমিকের প্রাণ গিয়েছে। সেই মৃতদেহও না কি পাঁচিল তৈরির কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকে তাই এই পাঁচিলকে বিশ্বের দীর্ঘতম কবরখানাও বলেন। কয়েকশো বছর ধরে ধীরে ধীরে কাজ চলতে থাকে। তবে চিনের পাঁচিল তৈরির কাজ আরও গতি পায় মিং সাম্রাজ্যের (১৩৬৮-১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) সময়ে। প্রায় তিনশো বছরে ৬৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাঁচিল তৈরি হয়। বেজিংয়ের উত্তর দিকের অংশ এই সময়ে তৈরি হয়। তবে মিং সাম্রাজ্যের পতনের পর এই পাঁচিলের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে আসে।

কিন্তু এই পাঁচিল কি সত্যিই কাজে লেগেছিল? সোজা উত্তর, না। রাজা বুদ্ধিমান। কিন্তু শত্রুরা আরও বুদ্ধিমান। তাই কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এই পাঁচিলকে শত্রুর আক্রমণ বিশেষ ঠেকাতে হয়নি। কারণ, পাঁচিল ডিঙিয়ে গাত্রব্যথা করার বদলে ঘুষ দিয়ে পাঁচিলের দরজা খুলিয়ে নেওয়া অনেক সহজ। আর কে না জানে, সব যুগেই বিভীষণেরা থাকেন। যেমন ধরুন চেঙ্গিজ খান। বিরাট যোদ্ধা। একই সঙ্গে বুদ্ধিও ক্ষুরধার। চিনের পাঁচিল ডিঙোতে যুদ্ধ নয়, রক্ষীদের ঘুষ দিয়েই কেল্লাফতে করেন তিনি। তবে মিং সাম্রাজ্যের পতনের পরে এই পাঁচিল রাজ-অনুগ্রহ হারাতে থাকে। মিংদের বিরোধী গোষ্ঠী মাঞ্চুসরা ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে মিংদেরই সেনাপতি উ সানগুইকে দলে টানেন। তিনিই শানহাই-এর দরজা খুলে দেন। সেই দরজা পার হতে পুরো মিঙ সেনার তিন দিন লেগে যায়।

কিন্তু এত দিন ধরে শত্রু সেনাও যা করতে পারল না কয়েকশো বছরে সাধারণ মানুষই তা করে ফেলেছে। খবর যা মিলছে, বেজিংয়ের কাছেই, এই পাঁচিলের প্রায় ১৯৬২ কিলোমিটার অংশ আর নেই। বেশ কয়েকশো বছর ধরে ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গিয়েছে এই অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানি বোমায় কিছু অংশের ক্ষতি হয়েছিল। চিনের সেনা আবার পাঁচিলের কিছু অংশ ভেঙে বাঙ্কার বানায়। তবে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে নির্মাণ কাজে। বিনে পয়সায় পাঁচিল ভেঙে ইঁট, কাঠ নিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়েছেন অনেকেই। আবার কয়েকটি জায়গায় পাঁচিলের কাছ থেকে মাটি কাটায় পাঁচিল ধসে গিয়েছে। আইন আছে, কিন্তু চিনেও আইন প্রয়োগেই যত সমস্যা। অনেকেরই আশঙ্কা, অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও ছোট হয়ে যাবে এই পাঁচিল।

china great wall ming dynasty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy