চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে ‘দারুণ’ বৈঠক হয়েছে। এমনই জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য নিয়ে নানা সমঝোতার পথে হাঁটবে আমেরিকা এবং চিন! আর সেই সব বিষয় নিয়েই চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তাঁর। বৈঠক শেষেই চিনা পণ্যের উপর ধার্য করা আমদানি শুল্কের পরিমাণ কমানোর কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাম্প এবং জিনপিং। ২০১৯ সালের পর আবার দুই রাষ্ট্রনেতা মুখোমুখি বসলেন। সেই বৈঠক নিয়ে বিশ্বের বহু মহলেই কৌতূহল ছিল। প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠকে কী কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়েও জল্পনা চলছিল। বৈঠক শেষে সেই কৌতূহলের অবসান ঘটালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক খুব ভাল হয়েছে। বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বৃহস্পতিবারের বৈঠককে ১ থেকে ১০-এর মধ্যে কত নম্বর দিতে চান, জানতে চাওয়া হয় ট্রাম্পের কাছে। উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি এই বৈঠককে ১২ দেবেন!
কোন কোন বিষয়ে কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি খোলসা করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, শীঘ্রই এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে। তবে ট্রাম্প এ-ও বলেন, ‘‘আমি বলব না যে সব কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা (জিনপিঙের সঙ্গে) অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি।’’ বিস্তারিত তথ্য না-দিলেও ট্রাম্প জানান, জিনপিং তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ফেন্টানাইল বন্ধ করার ব্যাপারে যাবতীয় পদক্ষেপ করবেন। শুধু তা-ই নয়, অবিলম্বে আমেরিকার থেকে সয়াবিন কেনার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছেন বলে জানান ট্রাম্প। তার পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, চিনের উপর ধার্য শুল্কের পরিমাণ ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হবে।
আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে সংঘাতের অন্যতম কারণ বিরল খনিজ। সম্প্রতি, বিরল খনিজ রফতানির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল বেজিং। সেই বিধিনিষেধের কারণে দু’দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই আবহে ট্রাম্প-জিনপিং বৈঠকের অন্যতম বিষয় ছিল বিরল খনিজ, তা বলাই বাহুল্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, বিরল খনিজ সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমেরিকায় বিরল খনিজ রফতানির ক্ষেত্রে আর বাধা থাকবে না বলে জানান ট্রাম্প।
আরও পড়ুন:
বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে থাকা মার্কিন প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, বিরল খনিজ নিয়ে চিনের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি হয়েছে আমেরিকার। অর্থাৎ, আমেরিকায় বিরল খনিজের রফতানি অব্যাহত থাকবে আগামী এক বছর। ট্রাম্প এ-ও বলেন, ‘‘চিন অবিলম্বে আবার আমেরিকান সয়াবিন কেনা শুরু করবে। এটি আমাদের কৃষকদের জন্য বড় জয়।’’ দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অন্য পথে বইবে, আশাবাদী ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেন, ‘‘চিনে ফেন্টানাইল উৎপাদন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন জিনপিং।’’ বৈঠকের পর চিনের তরফে দাবি করা হয়, আমেরিকার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে জোর দেওয়া হবে।
আগামী বছরের এপ্রিলে চিন সফরে যাবেন বলেও জানান ট্রাম্প। তার পরে জিনপিং-ও আমেরিকায় আসতে পারেন, আশাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের চিন সফরের দাবি নিশ্চিত করেছে বেজিং। ট্রাম্প এ-ও জানান, বুসানের বৈঠকে তাইওয়ান প্রসঙ্গ ওঠেনি। উল্লেখ্য, প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাইওয়ানকে পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে মান্যতা দেন ট্রাম্প। কথা বলেন, সেখানকার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে। প্রশান্ত মহাসাগরের সাবেক ফরমোজ়া দ্বীপপুঞ্জকে বরাবরই নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে দাবি করে এসেছে বেজিং। এই তাইওয়ান নিয়ে আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘ দিনের।