Advertisement
E-Paper

তাপপ্রবাহে নাজেহাল ইউরোপ! স্পেনে পারদ ছাড়াল ৪৬ ডিগ্রি, ফ্রান্সে বন্ধ ১৯০০ স্কুল, ইটালির ১৭ শহরে সতর্কতা জারি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড়ের দ্বিগুণ গতিতে গরম বাড়ছে ইউরোপে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ০৯:৩৪
Europe faces heatwave, shuts school and Eiffel Tower in France, Italy limits work outdoors

গরমে নাজেহাল ইউরোপ। ছবি: রয়টার্স।

তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ! শেষ কবে এত গরমে কষ্ট পেয়েছে ইটালি, ফ্রান্স, স্পেনের মতো দেশগুলি, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। তবে গত কয়েক দিনে নাজেহাল অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না-বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফ্রান্সে স্কুল বন্ধ, আইফেল টাওয়ারের মতো পর্যটনস্থলগুলিতেও না-যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। অন্য দিকে, ইটালিতেও গরমের জেরে হাঁসফাঁস অবস্থা। মিলান, রোম-সহ দেশের ১৭টি জায়গায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুধু তাপপ্রবাহ নয়, তুরস্ক লড়াই করছে দাবানলের সঙ্গে। ইউরোপের এই তাপপ্রবাহকে ‘ব্যতিক্রমী’ বলছেন আবহাওয়াবিদেরা।

ইউরোপে সবে গরম পড়তে শুরু করেছে। আর গ্রীষ্মের শুরুতেই চড়চড়িয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। কোথাও কোথাও গরমের আগের সব রেকর্ড ভাঙছে। কোথাও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আবার কোথাও ৪৬ ডিগ্রি, কোথাও কোথাও আবার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। ইউরোপে দ্রুত উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অতীতে লক্ষ করা যায়নি বলেই মানছেন আবহবিদেরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্লেয়ার নালিসের মতে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড়ের দ্বিগুণ গতিতে গরম বাড়ছে ইউরোপে। এই রকম ভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মহাদেশটির লক্ষ লক্ষ মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। মহাদেশের বিভিন্ন দেশে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, ইটালি, গ্রিস এবং সুইৎজ়ারল্যান্ডে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে এই সময় তাপপ্রবাহের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তবে তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বগতি আগে দেখা যায়নি।

ফ্রান্স: মঙ্গলবার দেশের কিছু কিছু অংশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। বুধবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা। দেশের প্রায় ১৯০০ স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতি দিনই সেই সংখ্যা বাড়ছে। ১৬টি জায়গায় লাল সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় আবহাওয়া দফতর। পর্যটকদের জন্য বুধবারও আইফেল টাওয়ার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়েছে, ‘‘আইফেল টাওয়ার বন্ধ থাকার কারণে পর্যটকদের যে অসুবিধা হচ্ছে তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। তবে পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’

ইটালি: মিলান, রোম-সহ দেশের ১৭টি জায়গায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দিনের উষ্ণতম সময়ে ঘরের বাইরে বার না-হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন। কিছু কিছু জায়গায় বাইরে কাজ বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি না-হওয়া পর্যন্ত সতর্কতা এবং নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। ইটালির বোলোনা শহরে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত গরমই মৃত্যুর কারণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। গরমের সঙ্গে দোসর বিদ্যুৎবিভ্রাটও। বেশ কয়েকটি জায়গায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

স্পেন: রবিবার দক্ষিণ-পশ্চিম স্পেনের লা গ্রানাদো শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ছয় দশকে কখনও এত গরম পড়েনি সে দেশে। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের সরকারি আবহাওয়া বিজ্ঞান সংস্থা (এইএমইটি) জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অতীতে জুন মাসে এত গরম কোনও সময়ে পড়েনি এ দেশে। মঙ্গলবার এইএমইটি জানিয়েছে, স্পেনের ইতিহাসে ‘উষ্ণতম জুন’। ভূমধ্যসাগর উপকূলীয় এলাকাগুলিতে আরও তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছেন স্পেনের আবহবিজ্ঞানীরা। রোদে রাস্তায় না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছে সে দেশের সরকারও।

পর্তুগাল: লিসবন থেকে প্রায় ৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত মোরা শহরে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৪৬.৬ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। এমনই জানাচ্ছে পর্তুগালের আবহাওয়া বিভাগ (আইপিএমএ)। রাজধানী লিসবনেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদেরা। দিনকয়েকের মধ্যে আবহাওয়া পরিবর্তনের তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানাচ্ছে আইপিএমএ।

এ ছাড়াও, গ্রিস এবং তুরস্কের মতো দেশগুলি গরমের পাশাপাশি লড়াই করছে দাবানলের সঙ্গে। গ্রিসের একাংশেও তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। দক্ষিণ আথেন্সে বৃহস্পতিবার যে দাবানল লেগেছিল, তা আরও ছড়িয়ে পড়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে ইতিমধ্যেই বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। তুরস্কের অবস্থাও একই।

ব্রিটেন: দেশের বিভিন্ন জায়গার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। তবে ইউরোপের অন্য দেশগুলির তুলনায় যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। তবে সেখানেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গিয়েছে। সে দেশে এখন উইম্বলডন টেনিস টুর্নামেন্ট চলছে। বিশ্বের নানা প্রান্তের টেনিস তারকারা তো বটেই, অন্যান্য খ্যাতনামা ব্যক্তিরও ভিড় ব্রিটেনে। তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই।

Heatwave Europe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy