Advertisement
E-Paper

গাজ়ায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইজ়রায়েল, দাবি ট্রাম্পের! হুঁশিয়ারি, চুক্তিতে রাজি না হলে ফল ভুগতে হবে হামাসকেই

মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, গাজ়া নিয়ে ইজ়রায়েলি আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর প্রতিনিধিদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। ৬০ দিন যুদ্ধবিরতির শর্তে ইজ়রায়েল রাজি হয়েছে বলেও দাবি তাঁর।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ০৮:২২
US President Donald Trump claim that Israel agrees to conditions for 60-day Gaza ceasefire deal

গাজ়ায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইজ়রায়েল, জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গাজ়ায় ৬০ দিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইজ়রায়েল। এমনই দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণার পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য, ‘‘হামাস যদি এই শর্তে রাজি না হয়, তা হলে ফল ভাল হবে না!’’ এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারী কাতার এবং মিশরকে হামাসের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই দাবি নিয়ে ইজ়রায়েলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন, ‘‘এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার জন্য আমরা দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলব এবং কাজ করব।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেছেন, পশ্চিম এশিয়ার ভালর জন্য হামাস এই চুক্তি গ্রহণ করবে। তবে এই চুক্তিতে সম্মত না হলে যে হামাসেরই ক্ষতি হবে, সেই বার্তাও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

গাজ়া নিয়ে ইজ়রায়েলি আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর প্রতিনিধিদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলেই সমাজমাধ্যমের পোস্টে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যদিও তাঁর প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নাম প্রকাশ করেননি ট্রাম্প। তবে বিভিন্ন সূত্রের দাবি, আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মুখ্য উপদেষ্টা রন ডার্মার সাক্ষাতের কথা ছিল। সুতরাং ট্রাম্প এই বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘাত থামানোর কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করতেও রাজি। কাতার এবং মিশরের মতো দেশগুলি ইতিমধ্যেই দুই দেশের যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগী। গত জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতিতে রাজিও করানো হয়েছিল দু’পক্ষকে। শর্ত মেনে পণবন্দি বিনিময় হয়েছে। তার পরেও এখনও পুরোপুরি যুদ্ধ থামার কোনও লক্ষণ নেই! যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজ়ায় হামলা চালানোর অভিযোগ উঠছে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে। গাজ়ায় মানবিক সাহায্য এবং ত্রাণ পৌঁছোনোর পথ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। তবে বিভিন্ন মহলের চাপে গাজ়ায় ত্রাণ সরবরাহ কিছুটা শিথিল করলেও পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি নেতানিয়াহুর সরকার। ইজ়রায়েলের অবরোধের জেরে তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে প্যালেস্টাইন। অনাহারের শিকার লাখ লাখ প্যালেস্টাইনি। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। সেই আবহে বিশ্বনেতাদের একাংশের মুখে যুদ্ধ বন্ধের কথা শোনা গিয়েছে। এগিয়ে এসেছেন ট্রাম্পও। যদিও হামাসের অভিযোগ, ইজ়রায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য মদত দিচ্ছে আমেরিকাই! অতীতে ট্রাম্পকে ‘গাজ়া দখল’ করার হুঁশিয়ারি দিতেও শোনা গিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্যালেস্টাইনিদের গাজ়া ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প।

তবে ইজ়রায়েল এবং হামাস সংঘাত নিয়ে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে ট্রাম্পকে। দিন দুয়েক আগেই তিনি তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এর পোস্টে লিখেছিলেন, ‘‘গাজ়া নিয়ে চুক্তিটা এ বার হোক। ফেরানো হোক বন্দিদের।’’ গত শুক্রবারও এই নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ থামাতে যাঁরা মধ্যস্থতা করছেন, তাঁদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেই তাঁর ধারণা হয়েছে যে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছোনো সম্ভব। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, আর দেরি নেই। যারা এ বিষয়ে যুক্ত তাঁদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। মনে হয়, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি চালু হয়ে যাবে।’’ সেই দাবির দিন কয়েক পরেই ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের কথা জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

২০২৩ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস। তাতে প্রায় ১২০০ জনের প্রাণ গিয়েছিল। বন্দি করা হয়েছিল আড়াইশো জনকে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনও ৫০ জনের মতো ইজ়রায়েলি নাগরিক হামাসের হাতে বন্দি। ওই ঘটনার পর ইজ়রায়েলও পাল্টা হামাসের উপর হামলা চালায়। দীর্ঘ সংঘর্ষ চলার পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় দু’পক্ষ। কিন্তু মার্চেই আবার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালাতে শুরু করে ইজ়রায়েল। তাতেই ভেস্তে যায় ইজ়রায়েল-হামাস আলোচনা।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-কে হামাস জানিয়েছে যে, তারা আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু কিছু শর্ত রয়েছে। তা হল— অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এবং গাজ়া ছাড়তে হবে ইজ়রায়েলকে। হামাসের এই শর্তে খুব একটা আগ্রহ দেখাননি ইজ়রায়েলর প্রধানমন্ত্রী। তবে গাজ়ায় গণহত্যা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়েছে ইজ়রায়েল। যুদ্ধ থামানোর দাবিতে দেশের ভিতরেও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সব মিলেয়ে ঘরে ও বাইরে কিছুটা চাপেই আছেন নেতানিয়াহু। এই পরিস্থিতিতে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করার প্রস্তাবে রাজি হওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

Israel-Hamas Conflict Donald Trump ceasefire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy