জেল পালানোর রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতা ফাইল ছবি।
‘ব্যাঙ্কক হিলটন’! নাম শুনে পাঁচতারা হোটেল মনে হলেও আদতে তা এক দুর্ভেদ্য কারাগার। তাইল্যান্ডের এই জেল বিখ্যাত তার কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য। আর সেই বজ্রআঁটুনির জেরেই রসিকতার ছলে ‘ক্লং প্রেম সেন্ট্রাল প্রিজন’-কে পাঁচতারা হোটেলের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয় ‘ব্যাঙ্কক হিলটন’। সম্প্রতি এখানে ঘটে গিয়েছে চাঞ্চল্যকর একটি জেল পালানোর ঘটনা। প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ব্যাঙ্কক হিলটন থেকে পালিয়েছেন মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রাপ্ত ডেভিড ম্যাকমিলান। আর নিরাপত্তার পুরু চাদরে তাইল্যান্ডের এই জেলখানা থেকে পালাতে ডেভিডের লেগেছিল ঘরে তৈরি একটি মই, করাত, কালো ছাতা এবং একটি পর্ন পত্রিকা! এই সামান্য রসদে কী ভাবে কেল্লা ফতে করলেন মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা পাওয়া ডেভিড? এখন সেই কাহিনিই তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বিশ্বে।
২০ হাজার কয়েদি একসঙ্গে থাকেন তাইল্যান্ডের ক্লং প্রেম সেন্ট্রাল জেলে। প্রতি ঘরে ১৫০ জন অভিযুক্ত, তাঁদের সবার জন্য একটি মাত্র শৌচালয়। ডেভিড জানিয়েছেন, সর্বক্ষণ তাঁদের পায়ের গোড়ালির কাছে বাঁধা থাকত লোহার বেড়ি। বিছানার বালাই নেই। ২৪ ঘণ্টা তীব্র আলো আর চিৎকার চেঁচামেচির মাঝেই বেঁচে থাকতে হয় জেলের হাজার হাজার কয়েদিকে। এ তো গেল জেলের অন্দরের চিত্র, বাইরের অবস্থা আরও খারাপ। জেলের পরিসর ঘেরা কংক্রিটের উঁচু দেওয়ালে। বিদ্যুৎবাহী তারে মোড়া সেই দেওয়ালে হাত ছোঁয়ালেই মৃত্যু নিশ্চিত। কোনও ভাবে দেওয়াল টপকালেও নিস্তার নেই। জেলের দেওয়াল ঘিরে রয়েছে ১৬ মিটারের পরিখা। যে পরিখার চারপাশে কড়া নজরদারি প্রহরীদের। সব কিছুকে টপকে কী করে অসাধ্য সাধন করলেন ডেভিড?
১৯৯৩ সালে জোড়া মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা পান ডেভিড ম্যাকমিলান। করাত গিয়ে জেলের গরাদ কাটার কাজ শেষ হতেই লেগে গিয়েছে দীর্ঘ দিন। কারণ বেশি আওয়াজ করলে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়। গরাদ কেটে বেরোনোর পর জেল প্রহরীদের বোকা বানাতে ডেভিড ব্যবহার করেন যৌনতা বিষয়ক পত্রিকা। যে পত্রিকা হাতে পড়তেই গোগ্রাসে গিলতে শুরু করেন জেলের প্রহরীরা। আর সেই ফাঁকে দেওয়াল টপকে ধাঁ ডেভিড। কিন্তু সমস্যার তখনও যেন শেষ নেই। ডেভিডের পরিকল্পনা ছিল, সাঁতরে ১৬ মিটারের পরিখা পার করার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বদল করে হেঁটে পার হন পরিখার উপরের সেতু। যাতে কারও সন্দেহ না হয় সেজন্য ডেভিড সর্বদা হাতে রেখেছিলেন কালো ছাতা। যাতে মনে হয়, জেলের কোনও প্রহরী ছাতা হাতে কাজ করছেন।
এ ভাবে জেলের বজ্রকঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বোকা বানিয়ে ১৮ মাসের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বাইরের আকাশ দেখতে পান মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ডেভিড। জানা যাচ্ছে, তাইল্যান্ড ছেড়ে পালাতে ১,২০০ ডলার খরচ করে নকল পাসপোর্ট তৈরি করান তিনি। তার পর সোজা সিঙ্গাপুর। ইউরোপ ফেরার আগে কয়েক বছর পাকিস্তানেও কাটান ডেভিড। অতঃপর নিজের দেশ ইংল্যান্ডে ফিরতে পারেন।
বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডের সাজা মাফ হয়ে গিয়েছে ডেভিডের। তিনি এখন একজন স্বাধীন মানুষ। একদা জোড়া মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ডেভিড এখন সিসিটিভি বসানোর কাজ করছেন। আর তাঁর রোমহর্ষক জেল পালানোর বৃত্তান্তের কাছে যেন ম্লান হলিউডি চিত্রনাট্যও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy