ইউরোপে সবে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকাল। এরই মধ্যে হাঁসফাঁস মহাদেশের বেশির ভাগ অংশ। অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে কোথাও কোথাও দাবানলও শুরু হয়েছে। কোথাও তাপপ্রবাহে অসুস্থ হয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোথাও আবার গরমের কারণে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। রয়টার্স বলছে, বুধবার পর্যন্ত ইউরোপে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। স্পেনে চার জন, ফ্রান্সে দু’জন এবং ইটালিতে দু’জন মারা গিয়েছেন। ফ্রান্সে গরমে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৩০০ জন।
স্পেনের ক্যাটালোনিয়াতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে দাবানল। প্রশাসন জানিয়েছে, তাতে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। তাঁরা দু’জনেই ছিলেন কৃষক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার গাড়ি চেপে দাবানল অধ্যুষিত এলাকা থেকে পালানোর সময়ে পুড়ে মৃত্যু হয় ওই দু’জনের। জঙ্গলে আগুন ধরার কারণে ক্যাটালোনিয়া ঢেকে গিয়েছে কালো ধোঁয়ায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ হাজার মিটার উঁচুতে উঠে গিয়েছে ধোঁয়া। দমকলকর্মীরা আগুন নেবানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু গরমের কারণে তাতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া মঙ্গলবার ওই এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া প্রবাহিত হয়। তার জেরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রতি ঘণ্টায় ২৮ কিলোমিটার গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। ইতিমধ্যে ১৬ হাজার একর জমি আগুনের গ্রাসে। বেশির ভাগই চাষের জমি। আগুন নেবাতে গিয়ে আহত হয়েছেন প্রায় ৫০০ দমকলকর্মী।
এর মধ্যে স্পেনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে গরমের কারণে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বুধবার স্পেনে দিনের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের কারণে এক্সট্রিমাদুরা এবং করডোবায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ইউরোপের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলি মনে করছে, উষ্ণায়নের কারণেই স্পেনে এই তাপপ্রবাহ। জুনেই সে দেশে তাপমাত্রার বৃদ্ধি নজির গড়েছে। ভূমধ্যসাগরের জলের তাপমাত্রাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে সেই সাগর সংলগ্ন দেশগুলিতে তাপমাত্রা এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। রাতেও এতটুকু স্বস্তি নেই। স্পেনের দক্ষিণে মালাগা শহরে জনসাধারণের জন্য এসি শিবির খুলেছে রেডক্রস। প্রসঙ্গত, ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই গ্রীষ্মেও তাপমাত্রা সে ভাবে বাড়ে না বলে জনসাধারণের বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই।
তুরস্কের এজিয়ান সাগরের উপকূলে সেসমেতে চাষের জমিতে আগুন লাগে। তা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সংলগ্ন জঙ্গলে। বেশ কিছু এলাকার নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় কিছু হোটেল, রিসর্টও রয়েছে। সেগুলিতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
গরমে হাঁসফাঁস ইটালিও। সে দেশে যাঁরা দিনের বেলায় খোলা জায়গায় কাজ করেন, তাঁদের সুরক্ষার কথা ভেবে প্রোটোকলে সই করেছে দেশের শ্রম মন্ত্রক। সম্ভব হলে দিনের পরিবর্তে রাতে যাতে কাজ করতে পারেন কর্মীরা, সংস্থাগুলিকে সেই ব্যবস্থা করে দিতে বলেছে তারা। কাজের সময় কমানোর কথাও বলেছে মন্ত্রক। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে ইটালির সার্ডিনিয়ার সৈকতে তাপপ্রবাহের কারণে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ফ্লোরেন্সে বিদ্যুতের চাহিদা এতটা বেড়েছে যে, মাঝেমধ্যে লোডশেডিং হচ্ছে।
ফ্রান্সের বেশ কিছু জায়গায় বুধবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। সেখানে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের শক্তিমন্ত্রী। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০০ জন। তাপপ্রবাহের কারণে আশঙ্কায় জার্মানির প্রশাসনও। সেখানে গৃহহীন আট থেকে ১০ হাজার মানুষ। তাঁদের নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। সুইৎজ়ারল্যান্ডে বেজ়নাও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি চুল্লির মধ্যে একটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আরে নদীর জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এই সিদ্ধান্ত। এই আবহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৪০ সালের মধ্যে সেখানে কার্বন নিঃসরণ ৯০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।