শুধু আমেরিকা নয়। কর হ্রাসের প্রস্তাব সংক্রান্ত যে বিল ঘিরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সদ্য-প্রাক্তন উপদেষ্টা ইলন মাস্কের সংঘাত, তার প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতিতেও। কারণ, ট্রাম্পের অনুমোদিত ওই বিলের যে বিষয়গুলি নিয়ে মাস্কের আপত্তি ছিল, তার অন্যতম হল রেমিট্যান্সের উপর করের হার হ্রাস।
যে সব দেশ থেকে ভারতে রেমিট্যান্স হিসেবে সব চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা আসে, সেই তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। ভারতীয় কর্মীরা বিদেশে চাকরি করে যে অর্থ দেশে পাঠান, তাকেই রেমিট্যান্স বলা হয়। গত ২২ মে আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভস’-এ কর হ্রাস সংক্রান্ত ‘জনকল্যাণমূলক বিলে’ অনুমোদন দেওয়ার পরে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘‘এটি একটি বড় এবং সুন্দর বিল’’ (ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট)। তার পরেই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।
ওই বিলের প্রাথমিক খসড়ায় রেমিট্যান্সের উপর করের হার পাঁচ শতাংশ ধার্য করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পরে তা কমিয়ে সাড়ে তিন শতাংশ করা হয়। এই নীতি কার্যকর হলে সুবিধা হবে ‘গ্রিন কার্ড’ বা ‘এইচ১বি’ ভিসা নিয়ে আমেরিকায় কাজ করা ভারতীয়দের। করের হার কমলে তার সামগ্রিক সুফল মিলবে ভারতীয় অর্থনীতিতেও। কিন্তু টেসলা কর্ণধার মাস্ক তার বিরোধিতা করেছিলেন। বিশ্বব্যাঙ্ক এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে ভারত শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই প্রায় ১২৯০০ কোটি ডলার (১১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি) রেমিট্যান্স পেয়েছে। এই সংখ্যাটি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেট-অঙ্কের কাছাকাছি!
আরও পড়ুন:
গত ১০ বছরে ভারতের সামগ্রিক রেমিট্যান্স ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ কোটি ডলার আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের থেকে এ দেশে এসেছে। মাস্কের নীতি মানা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ত ভারতীয় অর্থনীতিতে। নতুন বিলের ফলে অভিবাসী-অর্থে ‘কোপ’ কম পড়লেও তার অভিঘাত পুরোপুরি এড়াতে পারবে না নয়াদিল্লি। সাড়ে তিন শতাংশ কর বলবত হলেও সামগ্রিক ভাবে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স হারাবে ভারত।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, গত ২০ জানুয়ারি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসে মাস্ককে নিজের বিশেষ পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক দারুণ।’’ মাস্কের জন্য আলাদা একটি দফতর তৈরিও করা হয়েছিল। সেই ‘সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর’ (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই)-এর কাজ ছিল প্রশাসনের ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কাটছাঁট এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয়। তিনি অভিযোগ তোলেন, ‘জনকল্যাণমূলক বিল’ কার্যকর হলে আর্থিক চাপ বাড়বে মার্কিন সরকারের উপর।