Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Indian Air Strike

ভোরে বিমান হামলা, দিনভর কূটনৈতিক সাফল্য, দিনের শেষে অ্যাডভান্টেজে দিল্লি

পাকিস্তানের মাটিতে বায়ুসেনার পাইলটরা অভিযান চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই নয়াদিল্লিতে তৎপর হয়ে ওঠেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক-সহ ছয় আসিয়ান দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে।

দিনভর ব্যস্ততা ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকে। বিদেশ সচিব বিজয় গোখেল। ছবি: রয়টার্স।

দিনভর ব্যস্ততা ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকে। বিদেশ সচিব বিজয় গোখেল। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:২৫
Share: Save:

লড়াইটা কখনও সামরিক, কখনও রাজনৈতিক আর কখনও বা হল কূটনীতির ময়দানে। ভোর রাতে শুরুটা হয়েছিল পাকিস্তানের আকাশে ঢুকে ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ যুদ্ধবিমান দিয়ে আক্রমণের মধ্য দিয়ে। প্রতিপক্ষকে কোনও কিছু বুঝতে না দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ২৩.৬ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেন ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটরা। অব্যর্থ আঘাত হেনে প্রতিটি বিমানই অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে ভারতের মাটিতে। এর পরই শুরু হয় কূটনীতির লড়াই। পাক সেনা একের পর এক বিবৃতি দিতে থাকলেও চুপ ছিল ভারত। সাড়ে এগারোটায় প্রথম নীরবতা ভেঙে বক্তব্য রাখে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। বলা হয়, প্রতিরোধের লক্ষ্যে অসামরিক আঘাত হেনেছে ভারত।

নীরবতার কারণটা অবশ্য বোঝা গেল বেলা গড়াতেই। ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার বিবৃতি প্রমাণ করল কূটনীতির লড়াইতে পাকিস্তানের থেকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের বক্তব্য, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে ভারতের বাধ্যবাধকতা সবাইকে বুঝতে হবে।’ অন্য দিকে অস্ট্রেলীয় বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতি, ‘নিজেদের মাটিতে জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা সহ সমস্ত জঙ্গি ঘাঁটি বন্ধ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক পাকিস্তান।’ ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়ার এই বিবৃতিতে বোঝা গেল, দিনটা যে ভাবে শুরু করেছিল ভারত, শেষও হল সে ভাবেই। অর্থাৎ, দিনের শেষে সেই অ্যাডভান্টেজ ভারত।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বায়ুসেনার পাইলটরা মিরাজ যুদ্ধবিমান দিয়ে অভিযান চালানোর সঙ্গে সঙ্গেই নয়াদিল্লিতে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। কী কারণে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের আকাশে ২৩.৬ কিলোমিটার ঢুকে ভারতকে ১০০০ কেজি বোমাবর্ষণ করে বালাকোটের জইশ ঘাঁটি ধ্বংস করতে হল, তাই বোঝাতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন বিদেশমন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিরা। সেই কূটনীতিতে নেতৃত্ব দেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং বিদেশ সচিব বিজয় গোখেল। শুরুতেই আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক-সহ ছয় আসিয়ান দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশ সচিব বিজয় গোখেল।

এর পরেই সর্বদল বৈঠকের ডাক দেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেই বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, মার্কিন বিদেশ সচিব-সহ আরও বেশ কিছু দেশের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে তিনি নিজে কথা বলেছেন। প্রত্যেককেই তিনি বুঝিয়েছেন, ‘‘আমাদের যুদ্ধ পাকিস্তানের সঙ্গে নয়। আমাদের যুদ্ধ সন্ত্রাসের বিভিন্ন শিবিরের বিরুদ্ধে।’’

আরও পড়ুন: সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকুন, পাক জনতা ও সেনার উদ্দেশে বার্তা ইমরানের

ভারতের তরফে বিভিন্ন দেশকে এইবক্তব্য জানানোর পরই প্রথম কূটনৈতিক সাফল্য আসে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়ায়। জঙ্গিদমন এবং সন্ত্রাস রোধে পাকিস্তানকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলে তারা। অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী মারিসে পাইন বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবার মতো সন্ত্রাসের ঘাঁটি বন্ধ করতে পাকিস্তানের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাকিস্তানের মাটি থেকে জঙ্গি ঘাঁটি নির্মূল করতে ইসলামাবাদের সব রকমের চেষ্টা করা উচিত।’

আরও পড়ুন: প্রি-এম্পটিভ নন-মিলিটারি স্ট্রাইক! কী বলতে চাইল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক?

এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জইশ হামলার পরেও সারা দুনিয়ার সমর্থন আদায়ে সফল হয়েছিলভারত। মাসুদ আজহারকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে ঘোষণা করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব আনার কথা বলেছিল ফ্রান্স। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছিলেন,‘‘ভারত বড় কিছু একটা করতে চলেছে। ভারত প্রায় পঞ্চাশ জন মানুষকে হারিয়েছে। আমি ওদের অবস্থা বুঝতে পারছি ।’’

আরও পড়ুন: দু’পক্ষেরই সংযত হওয়া উচিত, পাক এলাকায় ভারতের প্রত্যাঘাতের পর পরামর্শ চিনের

যদিও এখনও পর্যন্ত কূটনৈতিক যুদ্ধে ভারতের সব থেকে বড় সাফল্য চিন। বরাবরই পাকিস্তানের বন্ধু চিন এখনও পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি। উল্টে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা মিটিয়ে নিতে ভারত ও পাকিস্তান, দুই দেশকেই পরামর্শ দিয়েছে। বেজিঙের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ পুলওয়ামা হামলার পরও তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল, ভারত যে ভাবে পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করছে, তা ঠিক নয়। কোনও একটি দেশকে একটি সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য এ ভাবে দায়ী করা যায় না। সেখান থেকে চিনের আজকের প্রতিক্রিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE