পহেলগাম কাণ্ডের জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ভাবে উত্তেজনা বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন দেশ। এ দিন পাকিস্তানের ‘বন্ধু’ বলে পরিচিত চিন জানিয়েছে, তারা উদ্ভূত পরিস্থিতির উপরে সতর্ক নজর রাখছে। চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই রবিবার কথা বলেন পাক বিদেশমন্ত্রী ইশহাক দারের সঙ্গে। পাকিস্তানি সূত্রের দাবি, পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক খুনের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিকে চিন সমর্থন করে। চিনের সরকারি মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’ এ খবর দিয়ে জানিয়েছে, ওই আলোচনার সময় ওয়াং জানান, চিন আশা করে দু’দেশই সংযমের পরিচয় দেবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাবে।
দ্বিপাক্ষিক এই উত্তেজনার মধ্যেই এ দিন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ল্যামি পরে ফোন করে কথা বলেন পাক বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গেও। ভারত যে পহেলগামের ঘটনা সহজে মেনে নেবে না, সেটা বুঝে পাকিস্তান সরকারের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন পক্ষ। এই অবস্থায় দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ইরানের প্রস্তাব কার্যত লুফে নিয়েছে ইসলামাবাদ। শনিবার বিকেলে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেকশিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তিনি ইরানের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে পাক সংবাদমাধ্যমের দাবি।
ভারত পহেলগাম হামলার বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাকিস্তানের উপরে চাপ বাড়াতে সক্রিয়। পাল্টা সক্রিয় পাকিস্তান এবং তাদের ‘বিশেষ বন্ধু’ চিনও। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে একটি প্রস্তাব আনা হলেও ‘বন্ধু’ চিনের সহযোগিতায় সেই প্রস্তাবের ভাষা দুর্বল করতে চেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তান। নিরাপত্তা পরিষদে পহেলগামে হামলার নিন্দা করা হলেও ২০১৯ সালের পুলওয়ামায় সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলার সময় যে ধরনের কড়া ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল, তা এ বারে হয়নি বলেই একটি সূত্রের দাবি।
দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার আবহে এ বার পাকিস্তানি মন্ত্রী হুমকি দিয়ে জানালেন, পাকিস্তানের বিভিন্ন গোপন ডেরায় রাখা ১৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের দিকে তাক করে রাখা আছে। পাক মন্ত্রীর এমন হুমকিতে দু’দেশের মধ্যে পারদ আরও চড়েছে। পাক মন্ত্রী হানিফ আব্বাসি সম্প্রতি একটি সাংবাদিক বৈঠকে এই হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত যদি জল বন্ধ করে, তবে যুদ্ধ হবে। তার জন্য ভারতকে তৈরি থাকতে হবে। পহেলগাম-কাণ্ডের পরেই পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। সিন্ধুর জলের উপরে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশের কৃষি নির্ভরশীল। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান প্রবল খাদ্যসঙ্কটে ভুগবে বলে আশঙ্কা সে দেশের আমজনতা থেকে কৃষক এমনকি রাজনীতিকেরাও।
এই প্রেক্ষিতেই পাকমন্ত্রীর দাবি, তাঁদের দেশের বিভিন্ন অংশে গোপন ডেরায় ওই সব ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রাখা হয়েছে। সেগুলির অবস্থান সম্পর্কে খুব বেশি কেউ জানে না বলেও দাবি তাঁর। হানিফ বলেন, ‘‘আমাদের ঘাঁটিতে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রাখা আছে। আমরা সেগুলি রেখে দিয়েছি শুধু ভারতের জন্যই। ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি তো মডেল হিসাবে রাখা হয়নি।’’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানের ওই সব ক্ষেপণাস্ত্রের ভয়েই ভারত এখনও সে দেশে হামলা চালায়নি। পাক মন্ত্রীর দাবি, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই পহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে ভারত। আগে নিজেদের দোষ খুঁঁজে দেখুক ভারত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দিকে আঙুল তোলার আগে নিজেদের ত্রুটি স্বীকার করো।’’
এ দিকে লন্ডনে পাক দূতাবাসে হামলার জন্য পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লা তারার ভারতের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের লন্ডনের দূতাবাসে দু’বার হামলা হয়েছে। পাথর ছোড়া হয়েছে। ভারতীয় সংস্থাগুলির উস্কানি এবং মদতেই এই হামলা হয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)