Advertisement
E-Paper

থামবে না ইজ়রায়েলের ‘সিংহ গর্জন’, তেহরানও আত্মসমর্পণ করবে না! সংঘর্ষ কি চলতেই থাকবে? কী করবেন ট্রাম্প?

গত বছরের মতো এ বার আর ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষ কয়েক দিনের মধ্যে থেমে যাবে না। বরং তা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। এমনটাই অনুমান করছে ওয়াকিবহাল মহল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ১৯:৪৩

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সংযমের কোনও লক্ষণই নেই! ইজ়রায়েলও তাদের ‘সিংহ গর্জন’ (অপারেশন রাইজ়িং লায়ন) থামাবে না। ইরানও বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের পক্ষেও আত্মসমর্পণ করা সম্ভব নয়। ফলে গত বছরের মতো এ বার আর ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষ কয়েক দিনের মধ্যে থেমে যাবে না। বরং তা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। এমনটাই অনুমান করছে ওয়াকিবহাল মহল। সে রকম হলে, পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতি আরও ডামাডোলের দিকে এগিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

ইরান ‘পারমাণবিক শক্তিবৃদ্ধি’ চালিয়ে যাচ্ছে, এই আশঙ্কা থেকেই তাদের উপর এ বার হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। তাদের দাবি, ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র এলে অস্তিত্বসংঙ্কটে পড়বেন ইহুদিরা। সেই কারণেই তারা ইরানে হামলা চালিয়েছে। তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুও মূলত ইরানের পরমাণুকেন্দ্র এবং সামরিক ঘাঁটি। যত ক্ষণ না তেহরান তাদের পারমাণবিক শক্তিবৃদ্ধির কর্মসূচি না থামাচ্ছে, তেল আভিভ চুপ থাকবে না।

ইরানের পাল্টা দাবি, তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না। তবে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার তাদেরও আছে। ‘নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন’ চুক্তি মেনেই তারা ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা বাড়িয়েছে। কিন্তু তাতে আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ততটাই বাড়ানো হয়েছে, যতটা গবেষণার কাজে লাগে। পরমাণু প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ওষুধ তৈরির চেষ্টা চলছে, যা ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে বলেই দাবি করেছে ইরান। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তেহরানের অভিযোগ, ইজ়রায়েল বেআইনি ভাবে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তাই আত্মরক্ষার্থে তারাও বাধ্য হয়েছে প্রত্যাঘাত করতে। ইজ়রায়েল ক্রমাগত হামলা চালিয়ে গেলে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে তাদেরও জবাব দিতে হবে।

আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের প্রাক্তন কর্মী ড্যানিয়েল বি শার্পো সংবাদপত্র ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-কে বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, এই সংঘর্ষে কয়েক দিনের মধ্যে থামবে না। যুদ্ধ থামতে বেশ কয়েকটা সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।’’ চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই কাজ করতেন ড্যানিয়েল। তাঁর মত, ‘‘ইরান যত ক্ষণ না তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করছে, তত ক্ষণ ইজ়রায়েলও থামবে না।’’

বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি, ইরানের নাতনজ় এবং ফরডোর মতো বেশ কয়েক পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। শুধু তা-ই নয়, সেনার ছ’জন শীর্ষ আধিকারিক এবং ন’জন পরমাণু বিজ্ঞানীকেও হত্যা করেছে। তা নিশ্চিতও করেছে ইরান সরকার। অনেকের মত, ইজ়রায়েল ভেবেছিল, এতেই হয়তো ইরান তাদের পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। উল্টে প্রত্যাঘাতের পথে হেঁটেছে ইরান। এবং ইরান তা-ই করে যাবে বলে মনে করছেন লন্ডনের গবেষণা সংস্থা চ্যাটহাম হাউসের পশ্চিম এশিয়া সংক্রান্ত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ সানাম ভাকিল। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-কে তিনি বলেন, ‘‘তেহরান এত সহজে, এত তাড়াতাড়ি আত্মসমর্পণ করবে না। ইরান তাদের পরমাণু প্রকল্পের কাজ থামাবে না। এখন তাদের লক্ষ্য টিকে থাকা।’’

তবে ওয়াকিবহাল মহলের মত, সবটাই নির্ভর করছে আমেরিকার ভূমিকার উপর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘দূরত্ব’ বজায় রাখবেন না কি সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেবেন, তার উপরেই নির্ভর করছে ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত কত দিন জারি থাকবে। ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তিনি ইরানের উপর ইজ়রায়েলি হামলার কথা আগে থেকে জানতেন। কিন্তু আমেরিকা এখনও কোনও রকম সংঘর্ষে সরাসরি জড়িত নয়। দু’দেশের মধ্যে সমঝোতারও বার্তা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে একই সঙ্গে তিনি ইরানকে বলে রেখেছেন, আমেরিকার উপর কোনও রকম আঘাত এলে তারাও চুপ থাকবে না।

শার্পো বলছেন, ‘‘আমেরিকা যুদ্ধে যোগ দেবে কি না, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া ট্রাম্পের পক্ষে সহজ হবে না। যদি না ইরান তাদের বাধ্য করে।’’ সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এই বিবাদ মিটতে পারে একমাত্র আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই।’’

অনেকের দাবি, ইজ়রায়েল চাইছে আমেরিকা যুদ্ধে যোগ দিক। কারণ, তারাও জানে, তাদের একার পক্ষে ইরানের পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তাদের সেই অস্ত্র নেই। এর জন্য আমেরিকার সাহায্য প্রয়োজন। যদিও ইজ়রায়েল এই সংক্রান্ত দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। এক ইজ়রায়েলি আধিকারিক সিএনএন-কে বলেছেন, ‘‘আমেরিকা এই যুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিলে তাদের আটকানো সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের। ইজ়রায়েলের এখানে কিছু করার নেই।’’

Iran israel
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy