Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ISKON

ইসকন মন্দিরে লোন উল্ফ কায়দায় জঙ্গি হানার ছক! ভারতীয় গোয়েন্দারা সতর্ক করল ঢাকাকেও

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাস ধরে আইএসের মতো সংগঠনের বিভিন্ন প্রচার শাখা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস (ইসকন)-কে ‘হিন্দুত্বের প্রতীক’ হিসাবে প্রচার শুরু করেছে।

বাংলাদেশে জঙ্গি হানার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে জঙ্গি হানার আশঙ্কা রয়েছে।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:৫৩
Share: Save:

টার্গেট ইসকন। বাংলাদেশে ‘লোন উল্ফ’ কায়দায় ইসকনের যে কোনও মন্দিরে বড়সড় হামলা চালাতে পারে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মদতে চলা নব্য জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর মতো সংগঠন। গত কয়েক মাসে জোগাড় করা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই আশঙ্কা ভারতের প্রথম সারির একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার।

লোন উল্ফ অর্থাৎ সংগঠিত ভাবে নয়, কোনও সংগঠনের সরাসরি নির্দেশ ছাড়াই মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যক্তিবিশেষ এই হামলা চালাতে পারে। সাম্প্রতিক অতীতে লন্ডন, প্যারিস, নিউ ইয়র্কের মতো জায়গায় এ রকমই বেশ কয়েকটি জেহাদি হামলা হয়। হামলা পরবর্তী সময়ে আইএস তার দায় নিয়েছে বটে, কিন্তু হামলাকারীর সঙ্গে তাদের সাংগঠনিক কোনও সরাসরি যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাস ধরে আইএসের মতো সংগঠনের বিভিন্ন প্রচার শাখা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস (ইসকন)-কে ‘হিন্দুত্বের প্রতীক’ হিসাবে প্রচার শুরু করেছে। সম্প্রতি ‘উম্মাহ নিউজ’ নামে আইএসের একটি প্রচার চ্যানেলেও ইসকনকে ‘হিন্দুত্বের প্রতীক’ হিসাবে তুলে ধরে আক্রমণ করা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, আইএস মনোভাবাপন্ন বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর যে সব নথি তাঁরা পেয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট— ওই সংগঠনের উপর হামলার ছক কষা হয়েছে। এক গোয়েন্দার কথায়, ‘‘সামগ্রিক ভাবে ইসকন ওদের টার্গেট। এখনও পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন তথ্য যা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা থেকে আমাদের ধারণা, বাংলাদেশে ইসকনের কোনও মন্দিরে হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”

আরও পড়ুন: মার্কিন কংগ্রেসে কাশ্মীর নিয়ে বিপাকে নরেন্দ্র মোদী সরকার

অন্য এক গোয়েন্দা কর্তা স্বীকার করেন, এখনও পর্যন্ত পাওয়া বিভিন্ন তথ্য সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ওই আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ভারত এবং বাংলাদেশে জিহাদিরা ক্রমাগত কোণঠাসা হচ্ছে। অন্য দিকে, ইরাক এবং সিরিয়াতেও একের পর এক ঘাঁটি হারিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আইএসের। তিনি বলেন, ‘‘নব্য জেএমবিকে সামনে রেখে বাংলাদেশে নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইএস। কিন্তু ঢাকা হোলি আর্টিজান কাফে অ্যাটাক ছাড়া বড় কোনও হামলায় সাফল্য পায়নি নব্য জেএমবি। উল্টে গত দু’বছরে তাদের সংগঠন ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে, লাগাতার পুলিশি অভিযানে।”

কেন্দ্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেএমবি বা নব্য জেএমবি-র মতো সংগঠন পশ্চিম এশিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা টাকা সাহায্য পায় জিহাদি কার্যকলাপ চালানোর জন্য। কিন্তু সেই তহবিলের জোগান নির্ভর করে সংগঠনের সাফল্যের উপর। তাই এই মুহূর্তে বড় ধরনের একটি হামলা চালিয়ে শিরোনামে আসতে মরিয়া বাংলাদেশের এই জঙ্গি গোষ্ঠী।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘‘ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সারা বিশ্বে এর শাখা ছড়িয়ে রয়েছে। প্রচুর বিদেশি ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে হামলা চালালে আন্তর্জাতিক স্তরে উঠে আসবে হামলাকারী সংগঠনের নাম।’’

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জিহাদি কার্যকলাপকে সমর্থন করে এমন একাধিক ধর্মীয় সংগঠন ইসকনকে নিয়ে বিদ্বেষমূলক প্রচার চালাচ্ছে যাতে হামলার জমি তৈরি করা সম্ভব হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, যে পদ্ধতিতে ওই জঙ্গি সংগঠনগুলি এগোচ্ছে, তাতে ভারতে ইসকনের কোনও মন্দিরে হামলা চালানো কঠিন। বরং অনেক সহজ বাংলাদেশে আঘাত হানা।

ইসকনের অন্যতম মুখপত্র রাধারমন দাসের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটা আশঙ্কা আমাদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে।” তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তাঁদের ১৯টি মন্দির রয়েছে। রাধারমনের কথায়, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে আমরাও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।” ইসকনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের সংগঠন প্রত্যন্ত গ্রামে ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিল সরবরাহ করে। ফলে তাদের সদস্যদের প্রত্যন্ত গ্রামেও নিয়মিত যাতায়াত। সে বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না কিছু জিহাদি সংগঠন। রাধারমন দাসের দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের গোচরে এনেছেন। অন্য দিকে, বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতীয় দূতাবাসকেও তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছেন।

ভারতীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সিলেটে ইসকনের একটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তবে তার সঙ্গে সরাসরি কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগ ছিল না। গোয়েন্দাদের দাবি, লোন উল্ফ অর্থাৎ স্থানীয় কোনও ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তিকে মতাদর্শগত ভাবে হামলায় মদত দিয়ে এই ‘অপারেশন’ চালানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। সংগঠিত ভাবে করলে হামলার আগেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি অংশ জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাকেও গোটা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ISKON Terrorism IS Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE