কাতারে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতাদের উপর হামলা চালাতে চায়নি মোসাদ। মধ্যস্থতা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তার মাঝে এ ভাবে হামলা চালানো নিয়ে দোলাচলে ছিলেন ইজ়রায়েলি সেনার একটি অংশও। তা সত্ত্বেও কাতারের দোহায় বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইহুদি সেনার বিমান। তেমনটাই দাবি করা হল মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে।
গত সপ্তাহে মঙ্গলবার দোহার কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায় ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান। যদিও ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার সরাসরি দোহায় হামলার কথা স্বীকার করেনি। সরকারি বিবৃতিতে শুধু জানানো হয়েছিল, হামাসের নেতাদের নিশানা করে ‘সুনির্দিষ্ট’ হামলা চালানো হয়েছে। কাতারের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বিমানহানার নিন্দা করে বলেছিলেন, ‘‘দোহায় একটি আবাসিক ভবনে হামলা হয়েছে। সেখানে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর কয়েক জন নেতা থাকেন।’’ কিন্তু কারা হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে কিছু বলেনি তারা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, কাতারে হামাস নেতাদের উপর হামলার ‘সময়’ নিয়ে সংশয় ছিল ইজ়রায়েলি সেনার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জ়ামিরের মনে। কিন্তু যে গতিতে হামাসের সঙ্গে মধ্যস্থতা নিয়ে আলোচনা চলছিল, তাতে বিরক্ত ছিলেন নেতানিয়াহু। ধৈর্যও হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই তিনিই চাইছিলেন হামাস নেতাদের নিকেশ করতে। তাঁকে এ ব্যাপারে সমর্থনও করেছিলেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কার্টজ় এবং রণকৌশল দফতরের (স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি) মন্ত্রী রন ডার্মার। তার পরেই হামলার সিদ্ধান্ত হয়।
‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইজ়রায়েলি সেনার একাংশের মতো মোসাদও কাতারে হামলার বিষয়ে একমত ছিল না। ইজ়রায়েল-হামাসের মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার। মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নিয়া জানিয়েছিলেন, কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, তা তিনি নষ্ট করতে চান না। নয়তো মোসাদের ক্ষমতা রয়েছে বেছে বেছে হামাস নেতাদের হত্যা করার।
প্রসঙ্গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসকে নির্মূল করতে প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ড গাজ়ায় হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। এর পরে হামাসের মিত্র ইরান, লেবাননের হিজ়বুল্লা, ইয়েমেনের হুথি এবং সিরিয়ায় ইজ়রায়েলি হামলা হয়েছে। সেই তালিকায় যুক্ত হল কাতারও। ঘটনাচক্রে, পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধ এই রাষ্ট্রও ইজ়রায়েলের মতো ‘আমেরিকার মিত্র’ বলে পরিচিত। এ নিয়ে প্রশ্নের মুখেও পড়েছে নেতানিয়াহুর সরকার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইজ়রায়েলি হামলা সম্পর্কে আমেরিকা কিছু জানত না। যখন জেনেছেন, তখনই এ ব্যাপারে কাতার সরকারকে সতর্ক করেছে তাঁর প্রশাসন। দোহায় হামলা নিয়ে অন্য দেশের নিন্দার মুখে পড়লেও নেতানিয়াহু বার বার বুঝিয়েছেন, তিনি কোনও ভুল করেননি! আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে এক ভিডিয়ো বার্তায় নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণকে ৯/১১-এর হামলার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ৯/১১-এর হামলার পর আমেরিকা যে ভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল, ইজ়রায়েলও দোহায় সেই কাজই করেছে বলে দাবি নেতানিয়াহুর।
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মহলকে নিশানা করে বলেছেন, ‘‘আমেরিকা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পর তারা কী করেছিল? তারা কী বলেছিল, পাকিস্তানের সঙ্গে ভয়াবহ কাজ করা হয়েছে? তাই না? তারা আমেরিকার প্রশংসা করেছিল, হাততালি দিয়েছিল। তাদের উচিত একই নীতি অবলম্বন করে ইজ়রালেরও প্রশংসা করা।’’