জন নিরাপত্তা আইনে বন্দি খুড়তুতো দাদার মুক্তির জন্য দিনরাত এক করে দিয়েছিলেন। কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত সেই সমীরা ফজিলিই এখন আমেরিকায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে। তাঁকে হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকনমিক কাউন্সিলের (এনইসি) ডেপুটি ডিরেক্টর নিয়োগ করেছেন জো বাইডেন। আগামী দিনে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
পেশায় আইনজীবী তথা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ সমীরার বাবা ইউসুফ ফজিলি এবং মা রফিকা ফজিলি, দু’জনেই কাশ্মীরের বাসিন্দা এবং পেশায় চিকিৎসক। ১৯৭০-’৭১ নাগাদ আমেরিকা চলে যান তাঁরা। সেখানেই জন্ম সমীরার। হার্ভার্ড এবং ইয়েল ল স্কুলের ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। বারাক ওবামার সরকারেও এনইসি-র ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন তিনি।
সমীরা এবং তাঁর পরিবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাশ্মীর নীতির ঘোর সমালোচক। ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট মোদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করলে, ৮ অগস্ট সমীরার খুড়তুতো দাদা মুবিন শাহ-কে জন নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়। সেই সময় ওয়াশিংটনে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে মুবিনের মুক্তি নিশ্চিত করেন তাঁরা।
মালয়েশিয়ায় হস্তশিল্পের ব্যবসা রয়েছে মুবিনের। ২০১৯ সালে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরের বাড়িতে ফিরেছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে সেই সময়ই উপত্যকার জন্য সংরক্ষিত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নিয়ে যাতে কোনও রকম বিক্ষোভ মাথাচাড়া না দেয়, তার জন্য উপত্যকার সমস্ত প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের আটক করে কেন্দ্র। সেই তালিকায় ছিলেন মুবিনও। উপযুক্ত কারণ না দেখিয়ে মুবিনকে আটক করা হয় বলে অভিযোগ।
প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ার পাশাপাশি একাধিক বার কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-কে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুবিন। ২০০৮ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুরু করাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল তাঁর। ২০১৯ থেকে যদিও দুই দেশের মধ্যে যাবতীয় লেনদেন বন্ধ রয়েছে।
সমীরা এবং মুবিনের বাবা দুই ভাই। তাই খুড়তুতো দাদার মুক্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা পরিবার। সমীরার বোন ইউসরা ফজিলি পেশায় মানবাধিকার আইনজীবী। ২০১৯ সালের নভেম্বরে আমেরিকার কংগ্রেসে বিষয়টি তোলেন তিনি। দাবি করেন, মুবিনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও ধারণাই নেই পরিবারের। এক জেল থেকে অন্য জেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সকলে। আমেরিকার বিদেশ দফতরকে বিষয়টি নিয়ে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করতে আর্জি জানান তিনি। তার পরই জানা যায়, আগরায় আটক করে রাখা হয়েছে তাঁকে।