Advertisement
০২ মে ২০২৪
Afghanistan Crisis

Kabul Airport Blast: কোথায় সেনা, কোথায় তালিবান, ছক কষেই আত্মঘাতী হানা! দেখুন সেই আতঙ্কের মানচিত্র

বৃহস্পতিবার রাতে পরপর দু’টি বিস্ফোরণ হয়েছে কাবুল বিমানবন্দর চত্বরে। তার পর থেকে প্রাণহানির সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলেই চলেছে।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২১ ১২:৪৮
Share: Save:

কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের পাঁচিল লাগোয়া বড় রাস্তাটির নাম এয়ারপোর্ট রোড। তার ঠিক পাশেই অপেক্ষাকৃত সরু আর একটি পথ— সার্ভিস রোড। গত ১৫ আগস্ট রাতে তালিবদের হাতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ার পর থেকে এই রাস্তাতেই আফগানবাসী নিয়ম করে এসে দাঁড়িয়েছেন। অপেক্ষা করেছেন বিমানবন্দরের ভিতরে ঢোকার। বৃহস্পতিবারও তাঁরা ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার আশপাশে এয়ারপোর্ট রোড এবং সার্ভিস রোড চত্বরের উপগ্রহ চিত্র দেখাচ্ছে রাস্তা ঢেকেছে মানুষে। থিক থিকে ভিড়। ঠিক সেই সময়ে, সেই জায়গাতেই ঘটে বিস্ফোরণ।

বৃহস্পতিবার রাতে পরপর দু’টি বিস্ফোরণ হয়েছে কাবুল বিমানবন্দর চত্বরে। তার পর থেকে প্রাণহানির সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বদলেই চলেছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হিসেব বলেছে মৃতের সংখ্যা নব্বই ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন কম করে ১৫০ জন। এঁদের মধ্যে অবশ্য ২৮ জন তালিবান যোদ্ধা। পেন্টাগন জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে ১৯ জন আমেরিকার সেনাকর্মীও রয়েছেন।

কাবুল বিমানবন্দরের ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণ কখন কী ভাবে হল, কী ভাবে বাঁচবার আশায় অপেক্ষারত জনগণ মুহূর্তে রক্তাক্ত দেহ হয়ে গেলেন, দেখে নেওয়া যাক—

ব্যারন হোটেলে তখন আফগানবাসীদের ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করছিল  ব্রিটিশ সরকারি আধিকারিকেরা।

ব্যারন হোটেলে তখন আফগানবাসীদের ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করছিল ব্রিটিশ সরকারি আধিকারিকেরা। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

সন্ধ্যে ৬টা: বৃহস্পতিবার প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে ঠিক এই সময়েই। এয়ারপোর্টের কাছে ব্যারন হোটেল। দেশ ছাড়তে চাওয়া আফগানদের রাখা হয়েছিল সেখানে। আফগানিস্তান থেকে যাঁরা ব্রিটেনে যাবেন তাঁদের ওই হোটেলে রেখেই ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ব্রিটেনের সরকারি আধিকারিকেরা। পাহারায় ছিল আমেরিকার সেনাবাহিনীও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর ব্যারন হোটেল থেকে গুলির আওয়াজও পাওয়া যায়। তবে সেই গুলি কারা চালিয়েছিল হামলাকারী নাকি পাহারায় থাকা সেনা তা স্পষ্ট নয়। ব্যারন হোটেলে বিস্ফোরণে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সেই সংখ্যাও জানানো হয়নি।

দ্বিতীয় বিস্ফোরণ হয় এর কিছুক্ষণ পরেই। কাবুল বিমানবন্দরের অনেকগুলি মূল ফটকের একটি, অ্যাবি গেট। এই অ্যাবি গেট দিয়েই বিমানবন্দরে প্রবেশ করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার মানুষ। রিপোর্ট বলছে, এয়ারপোর্টের পাঁচিলের কাছে এই খাঁড়ির লাগোয়া রাস্তাতেই দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয়। জোরালো বিস্ফোরণের অভিঘাতে বিমানবন্দরে অপেক্ষারত আফগানদের দেহ উড়ে খাঁড়ির জলে পড়তেও দেখা যায়।

অ্যাবি গেটের সামনে আমেরিকার সৈন্য। রয়েছেন অপেক্ষারত আফগানবাসীও।

অ্যাবি গেটের সামনে আমেরিকার সৈন্য। রয়েছেন অপেক্ষারত আফগানবাসীও। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সৈন্যদের এই অ্যাবি গেটে মোতায়েন করা হয়েছিল অতি সম্প্রতি। তাঁরা গেটের ভিতরে বিমানবন্দরে পাহারা দিচ্ছিলেন। পাঁচিলের বাইরে ছিলেন তালিব যোদ্ধারা। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অনুযায়ী, বিস্ফোরণের আগে তালিবদের শূন্যে গুলি চালাতে দেখা যায়। তারপরেই বিস্ফোরণ হয় অ্যাবি গেটের সামনে। এই বিস্ফোরণটিকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ বলেই দাবি করেছে আমেরিকা। তারা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ঠিক আগের মুহূর্তে ভিড় লক্ষ্য করে হামলাকারীদের একজনকে এগোতে দেখা গিয়েছিল। আমেরিকার এক সরকারি আধিকারিকের কথামতো, ওই ব্যাক্তির শরীরে বিস্ফোরক বোঝাই জ্যাকেট বাঁধা ছিল।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে বিমানবন্দরের কাছে থাকা আমেরিকার নাগরিকদের সতর্ক করেছিল আমেরিকার প্রশাসন। এমনকি সম্ভাব্য হামলার কথাও বলা হয়েছিল তাঁদের।একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, সতর্ক বার্তায় আমেরিকার নাগরিকদের বিমানবন্দর চত্বর থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছিল। তবে বিমানবন্দর চত্বরের বাইরে থাকা আফগানদের কেন সতর্ক করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিমানবন্দরে প্রবেশাধিকার চেয়ে তখন ভিড় জমেছে রাস্তায়। ভিড় লক্ষ্য করেই হয় বিস্ফোরণ।

বিমানবন্দরে প্রবেশাধিকার চেয়ে তখন ভিড় জমেছে রাস্তায়। ভিড় লক্ষ্য করেই হয় বিস্ফোরণ। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

বিস্ফোরণের পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার সকালে ধোঁয়াশা ঢাকা কাবুলের একটি ছবিও ছড়িয়েছে নেটমাধ্যমে। প্রকাশ্যে এসেছে জখমদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি, রক্তে ভাসা খাঁড়িতে পড়ে থাকা দেহের ছবিও। তালিবান কব্জায় আফগানিস্তানের ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে সেইসব ছবিতে। ধরা পড়েছে শয্যার অভাবে জায়গা না পাওয়া জখম আফগানের আত্মীয়দের হাহাকারও। দেখে শিউড়ে উঠেছে বিশ্বের তাবড় শক্তিধর দেশ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেছেন, হামলাকারীদের ঢুঁড়ে বের করবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে থমকে গিয়েছিল উদ্ধারকাজ। কিছু দেশ উদ্ধারের কাজ আগেই বন্ধ করেছিল। এরই মধ্যে কাবুল বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তুরস্কও তাদের সেনা প্রত্যাহার করছে। শুক্রবার তার মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরের উদ্ধারকাজ নতুন করে শুরু হল।

বিস্ফোরণের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়েও দেশ ছাড়ার অনুমতি পাওয়া আফগানরা শুক্রবার ফের এসে দাঁড়িয়েছেন সেই এয়ারপোর্ট রোডেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan Crisis kabul airport blast ISIS-K
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE