Advertisement
E-Paper

সাউথ পয়েন্ট-প্রেসিডেন্সির পর থেকেই প্রবাসী, গরিব দুনিয়া ঢুঁড়ে ফেলেছিলেন অভিজিৎ

অভিজিতের বেড়ে ওঠার অংশটা কলকাতায় হলেও তাঁর জন্ম হয়েছিল মুম্বইতে। সেটা ১৯৬১-র ২১ ফেব্রুয়ারি। কয়েক বছর পর কলকাতায় চলে আসা। স্কুল জীবন সাউথ পয়েন্টে। তার পর বিটি রোডের ধারে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট-এ রাশিবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু বাড়ি থেকে দূরত্বটা একটা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। ফলে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সিতে। এ বার অর্থনীতি।১৯৮১তে প্রেসিডেন্সি থেকে অর্থনীতির স্নাতক হন অভিজিৎ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:২১
২০১৯ অর্থনীতি নোবেল পুরস্কার প্রাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

২০১৯ অর্থনীতি নোবেল পুরস্কার প্রাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

কলকাতার সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। দীর্ঘ কয়েক দশক বিদেশে। প্রবাসী। বর্তমানে মার্কিন মুলুকের স্থায়ী নাগরিক। কিন্তু তাতে কী! এ বছর অর্থনীতিতে যিনি যৌথ ভাবে নোবেল পেলেন, সেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগটা এখনও অটুট।

বাবা দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সির অধ্যাপক ছিলেন। অর্থনীতি পড়াতেন। আশির দশকে ওই কলেজেই অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন অভিজিৎ। ওই কলেজেরই আর এক কৃতি অমর্ত্য সেন এই অর্থনীতিতেই নোবেল পেয়েছিলেন ১৯৯৮তে। অভিজিৎ দ্বিতীয় বাঙালি, যিনি অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন। খবরটা পেলেন যখন, তখন মার্কিন মুলুকে মাঝরাত। সবে ঘুমিয়েছেন। মিনিট চল্লিশেক পর থেকেই ফোনের পর ফোন। শুভেচ্ছা বার্তায় ভেসে যাচ্ছেন যখন অভিজিৎ, কলকাতা থেকে তাঁর মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর ফোন টানা ব্যস্ত পেয়েছেন। তার মধ্যেই অভিজিতের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘খবরটা পেয়ে আমি খুশি।’’ না, এখানেই থামেননি তিনি। সঙ্গে জুড়লেন, ‘‘আমি পেয়েছি, তবে, বহু কৃতী ব্যক্তি রয়েছেন। বহু প্রবীণ গবেষক দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন।’’

আরও পড়ুন:বাঙালির ফের নোবেল জয়, অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

ঘটনাচক্রে এ বারের অর্থনীতির নোবেল যে দু’জনের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন অভিজিৎ, তাঁদের এক জন তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলো। নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলছিলেন, ডাফলো-ও কলকাতায় এসে দীর্ঘ দিন ছিলেন। এখানে কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যখন ওদের বিয়ে হয়নি, তখনও বেশ কয়েক বার আমাদের বাড়িতে থেকে গিয়েছে ডাফলো।’’

নোবেল কমিটিকে দেওয়া অভিজিৎ বিনায়কের প্রথম সাক্ষাৎকার শুনুন:

সোমবার নোবেল কমিটি অভিজিৎদের গবেষণা সম্পর্কে দু’এক কথা বলতে গিয়ে জানায়, মাত্র দু’দশকে ওঁদের গবেষণা পদ্ধতি উন্নয়ন অর্থনীতির রূপরেখা বদলে দিয়েছে। আর অভিজিৎ জানাচ্ছেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকের শেষে আমার স্ত্রী এস্থার ডাফলো আমার সঙ্গে কাজে যোগ দেয়। গত পঁচিশ বছরে বহু দেশ ঘুরে আমরা গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করেছি। ঘানা, চিলি, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত— সর্বত্র ঘুরে ঘুরে কাজ করেছি।’’

নোবেল কমিটিকে দেওয়া অভিজিতের স্ত্রী এস্থার ডাফলোর প্রথম সাক্ষাৎকার

পড়ুন আনন্দবাজারে অভিজিৎ বিনায়কের কলম: মন্দ নীতি দেশের মন্দই করে

অভিজিতের বেড়ে ওঠার অংশটা কলকাতায় হলেও তাঁর জন্ম হয়েছিল মুম্বইতে। সেটা ১৯৬১-র ২১ ফেব্রুয়ারি। কয়েক বছর পর কলকাতায় চলে আসা। স্কুল জীবন সাউথ পয়েন্টে। তার পর বিটি রোডের ধারে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট-এ রাশিবিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু বাড়ি থেকে দূরত্বটা একটা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। ফলে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সিতে। এ বার অর্থনীতি।১৯৮১তে প্রেসিডেন্সি থেকে অর্থনীতির স্নাতক হন অভিজিৎ। সেবছরই স্নাতকোত্তর পড়তে চলে যান দিল্লিতে— জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। এর পর হার্ভার্ড। সেখানে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ইনফরমেশন ইকনমিক্স’।

না, এর পর আর পিছনে ঘুরে দেখতে হয়নি অভিজিৎকে। নিজের পছন্দের এবং অনুসন্ধিৎসার বিষয় নিয়েই গবেষণা করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন মূলক কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন মহাসচিবের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা। গবেষণাপত্র, বিভিন্ন জার্নালে লেখার পাশাপাশি অভিজিৎ লিখে গিয়েছেন একের পর এক বই। তার মধ্যে অর্থনীতি বিষয়ে বিনায়কের লেখা চারটি বই বিশ্বজুড়ে বিপুল ভাবে সমাদৃত। তাঁর ‘পুওর ইকনমিক্স’ বইটি তো গোল্ডম্যান স্যাক্স বিজনেস বুক সম্মানে ভূষিতও হয়। একই সঙ্গে দু’টি তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন অভিজিৎ।

আনন্দবাজারে অতীতে লেখা অভিজিৎ বিনায়কের কলম পড়ুন: সব নেতাই সমান, এই হতাশা কিন্তু এক মস্ত ফাঁদ

ছেলে নোবেল পাওয়ার পর মা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় নিয়মিতই কথা হয়। এবং সে কথার বিষয় কিন্তু, ‘কী খেলি’, ‘কেমন ঘুরলি’ গোছের নয়। মা-ছেলের কথার বিষয়ও ছিল সমসাময়িক অর্থনীতি।আসলে অভিজিতের মূল পথচলাটাই তো অর্থনীতির রাস্তায়। দেশ যখন ‘নোটবন্দি’বা‘জিএসটি’-র মতো বিষয়ে তোলপাড়, অভিজিৎ তখন সে সবের কঠোর সমালোচনা করেছেন। হ্যাঁ, কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই। কারণ, দেশের অর্থনীতি থেকে তাঁর নজর কখনও সরেনি। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে-তে কর্মরত অভিজিৎ আসলে আম আদমির সমস্যার কথাই ভেবে গিয়েছেন। ভেবে গিয়েছেন, দারিদ্রের কারণ!

অভিজিতের নোবেল প্রাপ্তিতে অভিনন্দনের বন্যা বয়ে যাচ্ছে যখন, সেই সময়ে একটা মোক্ষম বিষয় মনে করিয়ে দিয়েছেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। টুইট করে জানিয়েছেন, শুধু অর্থনীতিতেই অবাধ যাতায়াত নয়, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন দারুণ রাঁধুনি।ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও তিনি অবাধ।

সাউথ পয়েন্ট থেকে নোবেলের মঞ্চ, অভিজিৎ কিন্তু রয়ে গিয়েছেন কলকাতার সঙ্গেই।

Abhijit Banerjee Nobel Prize 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy