Advertisement
E-Paper

ঘন ঘন আসছে-যাচ্ছে ট্রাক, দিনরাত হাতুড়ির শব্দ! জ়ুকেরবার্গদের ‘অদ্ভুত বাড়ি’ নিয়ে বিরক্ত প্রতিবেশীরা

১৪ বছর আগে ক্রেসেন্ট পার্কে আসেন জ়ুকেরবার্গ। তার পর থেকেই নাকি আশপাশের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। ডুমুরের ফুলের মতো কদাচিৎ মেটা-কর্তার দেখা মিললেও তাঁর ‘উপস্থিতি’ নিত্য হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন এলাকাবাসী। পরিস্থিতি ‌এমনই যে, অনেক প্রতিবেশীও তল্পিতল্পা নিয়ে এলাকা থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৫ ১৪:৩৭
মেটা-কর্তা মার্ক জ়ুকেরবার্গ।

মেটা-কর্তা মার্ক জ়ুকেরবার্গ। — ফাইল চিত্র।

ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টোর ক্রেসেন্ট পার্ক। বিলাসবহুল এই এলাকা তাবড় আইনজীবী, শিল্পপতি এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ঠিকানা। সেখানেই বাস মার্কিন শিল্পপতি তথা মেটা-র কর্ণধার মার্ক জ়ুকেরবার্গের। আর তা নিয়েই যত ঝামেলা!

গত কয়েক দশক ধরে এই ক্রেসেন্ট পার্ক ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যতম অভিজাত পাড়া। ওক, রেডউড এবং ম্যাগনোলিয়া গাছের মনোরম সবুজে ঘেরা বিলাসবহুল বাড়িগুলিতে থাকেন শহরের ধনী ও মান্যগণ্যেরা। প্রতিবেশীদের মধ্যেও যারপরনাই সদ্ভাব রয়েছে। বার্ষিক পার্টিতে লোকজনের ঢল দেখেই তা বেশ অনুমান করা যায়। এত দিন ক্রেসেন্ট পার্কের দৈনন্দিন জীবনও ছিল শান্ত, নিস্তরঙ্গ। কিন্তু মেটা-কর্তা জ়ুকেরবার্গের যাওয়ার পর থেকেই নাকি শুরু হয়েছে যত গন্ডগোল!

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স-এর একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ বছর আগে ক্রেসেন্ট পার্কে আসেন জ়ুকেরবার্গ। তার পর থেকেই নাকি ক্রেসেন্ট পার্কের আশপাশের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। ডুমুরের ফুলের মতো কদাচিৎ মেটা-কর্তার দেখা মিললেও তাঁর ‘উপস্থিতি’ নিত্য হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন এলাকাবাসী। পরিস্থিতি ‌এমনই যে, জ়ুকেরবার্গের অনেক প্রতিবেশীও তল্পিতল্পা নিয়ে এলাকা থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছেন।

ক্রেসেন্ট পার্কের এজউড ড্রাইভ এবং হ্যামিল্টন অ্যাভিনিউয়ে গায়ে গায়ে ১১টি বাড়ি রয়েছে জ়ুকেরবার্গের। ঝাঁ চকচকে এই বাড়িগুলির পিছনে মোট ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৯৬৪ কোটি টাকা) খরচ করেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। এর কোনও কোনওটি কিনতে মালিকদের ১৪.৫ মিলিয়ন ডলারও দিতে হয়েছে জ়ুকেরবার্গকে, যা বাড়িগুলির দামের দ্বিগুণ, এমনকি তিনগুণেরও বেশি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই একের পর এক পরিবারকে বাড়ি বিক্রি করে চলে যেতে দেখেছেন অন্য প্রতিবেশীরা।

এ হেন পাড়ায় এতগুলি বাড়ি বানালেও তার বেশির ভাগই খালি পড়ে রয়েছে। পাঁচটি বিলাসবহুল আবাসন মিলিয়ে একটি কম্পাউন্ড তৈরি করেছেন জ়ুকেরবার্গ, যেখানে তিনি, তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান এবং তাঁদের তিন মেয়ের জন্য একটি প্রধান আবাস ছাড়াও রয়েছে অতিথি নিবাস, সবুজে ঘেরা বিশাল বাগান, পিকলবল খেলার কোর্ট এবং একটি সুইমিং পুল। রয়েছে জ়ুকেরবার্গের স্ত্রীর একটি সাত ফুট উঁচু মূর্তি। গোটা প্রাঙ্গণটি সারি সারি উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা। ফলে এক বাটি চিনি কিংবা হলুদ চাইতে প্রতিবেশীর দরজায় কড়া নাড়ার জো নেই!

অন্য খালি আবাসনগুলির মধ্যে একটি বিনোদন এবং পার্টির জন্য ব্যবহৃত হয়। আর একটিতে গত কয়েক বছর ধরে একটি বেসরকারি স্কুল চালানো হচ্ছে। স্কুলে ১৪ জন শিশু পড়ে। অথচ, শহরের আইন অনুযায়ী স্কুল চালানোর জন্য এ পাড়ার কোনও বাড়ি ব্যবহার করার অনুমোদন নেই। তা সত্ত্বেও দিব্যি রমরমিয়ে চলছে মেটা-কর্তার স্কুল!

এই কম্পাউন্ডের নীচে গত আট বছর ধরে চলছে বেসমেন্ট তৈরির কাজ। ৭,০০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ওই বেসমেন্ট তৈরির কাজে দিনরাত বিশাল বিশাল মালবোঝাই ট্রাকের যাওয়া আসা লেগেই থাকে। ভারী যন্ত্রপাতির শব্দে কান পাতা দায়। শুধু তা-ই নয়, এলাকায় কড়া নজরদারিও চালু করেছেন জ়ুকেরবার্গ। নিজের বাড়ির চতুর্দিকে বসানো সেই ক্যামেরায় প্রতিবেশীদের বাড়ির ছবিও দেখা যায়। এ সবের সঙ্গে আবার রয়েছে জ়ুকেরবার্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর দল, যাঁরা কারণে-অকারণে পথচারীদের দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা বা জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকেন বলে অভিযোগ। আর এ সব কারণেই মেটা-কর্তা ও তাঁর পরিবারের উপর বিরক্ত ক্রেসেন্ট পার্কের বাসিন্দারা।

যদিও জ়ুকেরবার্গের মুখপাত্র অ্যারন ম্যাকলিয়ারের কথায়, ওই দম্পতি তাঁদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেশার অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মেটা-র মতো সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্তার জন্য স্বভাবতই কড়া নিরাপত্তার প্রয়োজন। সে কারণেই এই দূরত্ব এবং কড়াকড়ি। তিনি বলেন, ‘‘মার্ক, প্রিসিলা ও তাঁদের সন্তানেরা গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ওখানে বাস করছেন। ওঁরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। আশপাশের এলাকায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে যথাসম্ভব পদক্ষেপও করেন।’’

নিউ ইয়র্ক টাইম্‌সের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৬ সালে এই শহরেরই একটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বোর্ড জ়ুকেরবার্গের কম্পাউন্ড নির্মাণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু তাতে দমেননি মেটা-কর্তা। বরং একবারে কম্পাউন্ড না বানিয়ে ক্রমে শহরের একের পর এক বাড়ি সুচারু ভাবে দখল করছেন তিনি। এমনটাই বলছেন প্রতিবেশীরা। এমনকি, বেআইনি ভাবে স্কুল চালানো নিয়ে নাকি একাধিক বার অভিযোগও করেছেন জ়ুকেরবার্গের প্রতিবেশীরা। কিন্তু মেটা-কর্তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

জ়ুকেরবার্গকে নিয়ে অতিষ্ঠ এমনই এক প্রতিবেশী মাইকেল কিয়েশ্নিক। ৩০ বছর ধরে ওই এলাকায় তাঁদের বাস। কিন্তু এখন তাঁর বাড়িটি তিন দিকে জ়ুকেরবার্গের একাধিক বাড়ি দিয়ে ঘেরা। চড়া দামে তাঁর বাড়িটিও কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মেটা-কর্তা। কিন্তু সাধের বাড়িটি ছাড়তে চাননি মাইকেল। তবু, ভয়ে ভয়ে দিন কাটছে তাঁর। এই বুঝি উঠে যেতে হয়! মাইকেলের কথায়, ‘‘ধনকুবেররা সব জায়গায় নিজেদের মতো করে নিয়মকানুন তৈরি করে নেন। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। জ়ুকেরবার্গ এবং চ্যানও আলাদা নন, কেবল ফারাক এটাই যে— ওঁরা আমাদের প্রতিবেশী!’’

Mark Zuckerberg Facebook Meta California Priscilla Chan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy