Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘সত্যিটা কোনও সীমান্ত বদলে দিতে পারবে না’

মেরুন গাউন আর টুপি পরে বন্ধুদের সঙ্গে মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। কাউকে যেন খুঁজছিলেন । সদ্য আঠারোয় পা দেওয়া সারাই রুইজের স্কুলে আজ গ্র্যাজুয়েশন উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠান।

 বাবার সঙ্গে সারাই।

বাবার সঙ্গে সারাই।

 সংবাদ সংস্থা
মেক্সিকো শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

মেরুন গাউন আর টুপি পরে বন্ধুদের সঙ্গে মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। কাউকে যেন খুঁজছিলেন । সদ্য আঠারোয় পা দেওয়া সারাই রুইজের স্কুলে আজ গ্র্যাজুয়েশন উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠান। আলো ঝলমলে মঞ্চে যখন খুশিতে উপচে পড়ছে বাকিরা, তখন সারাইয়ের বিষণ্ণ মুখখানা মায়ের চোখ এড়ায়নি। কিন্তু তিনি নিরুপায়। সকলের বাবা-মা, দাদু-দিদা এসেছেন। সারাইয়ের সঙ্গে এসেছেন শুধু মা। বিশেষ দিনে বাবাকে কাছে না-পাওয়ায় কষ্টটা সারাইকে দমাতে পারেনি। অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই গাউন আর টুপিটা পরেই দৌড়োলেন বাড়ির দিকে। টেক্সাস থেকে মেক্সিকো। রাস্তা কম নয়। সারাই জানতেন সীমান্ত-সেতুর ও-পারে অপেক্ষা করছেন বাবা। এ-পারে আসা বারণ যে! তারজালি আর স্টিল ফ্রেমের বেড়া পেরিয়েই বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। জল বাবার চোখেও।

সেই মুহূর্তটা ক্যামেরাবন্দি করে সম্প্রতি ফেসবুকে দিয়েছিলেন সারাই। সঙ্গে গল্পটাও। লিখেছিলেন, ‘‘জানতাম বাবা আমার এই মুহূর্তের শরিক হতে পারবেন না। তাই এই পোশাকে নিজেই বাবার সামনে হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।’’ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োর সাক্ষী রইলেন প্রায় ২৮ লক্ষ নেটিজেন।

সারাইয়ের জন্ম আমেরিকার উইসকনসিনে। সারাইয়ের বয়স যখন চার, তখন তাঁর বাবা এস্তেবানকে আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কারণ মেক্সিকোর নাগরিক এস্তেবানের কাছে আমেরিকায় বসবাসের ছাড়পত্র ছিল না। সাত বছর বয়স পর্যন্ত তাই মায়ের সঙ্গে আমেরিকায় ছিলেন সারাই। ছোট্ট সারাইকে বুকে জড়িয়ে বাবা বলেছিলেন, ‘‘ভয় পেয়ো না। ঈশ্বর ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।’’ পরে অবশ্য মা-মেয়ে মেক্সিকোর নুয়েভো লারেডোতে চলে আসেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে এখনও সেখানেই থাকেন সারাই। তবে স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। যে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেওয়াল তুলতে বদ্ধপরিকর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প, সেই সীমান্ত পেরিয়েই রোজ মেক্সিকো থেকে টেক্সাসে পড়তে আসেন তিনি। স্কুলের পর কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে ফের বাড়ি ফেরেন। টেক্সাসেই পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যান। কিন্তু সীমান্ত বন্ধ করে দিলে কী হবে, সেই আশঙ্কাও রোজে কুরে কুরে খায় তাঁকে।

সীমান্তের এ-পারে সারাইয়ের মতো বহু ছেলেমেয়ে ‘দ্য গ্রেট আমেরিকান ড্রিম’-এর জাল বুনে চলেছেন রোজ। অথচ মার্কিন সরকারের তথ্য বলছে, গত মাস পর্যন্ত মেক্সিকো সীমান্তে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার শরণার্থীকে আটক করেছে তারা। সারাইয়ের বিশ্বাস, কোনও বাধাই ওঁদের আটকাতে পারবে না। তাঁদের উদ্দেশে সারাই ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমরা যে একটাই পরিবার সেই সত্যিটা কোনও সীমান্ত, কোনও সেতু বদলে দিতে পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Border Areas Mexico Facebook
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE