Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গি দমনে বাছাবাছি নয়, পাকিস্তানকে বার্তা দিয়ে মোদীর পাশে ওবামা

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের পরে আসিয়ান গোষ্ঠীর বৈঠক। দু’দিনের মধ্যেই ফের নাম না করে সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে এক হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকাও জানিয়ে দিল, জঙ্গি দমনে বাছাবাছি করলে চলবে না।

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের পরে আসিয়ান গোষ্ঠীর বৈঠক। দু’দিনের মধ্যেই ফের নাম না করে সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে এক হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকাও জানিয়ে দিল, জঙ্গি দমনে বাছাবাছি করলে চলবে না। প্রতিবেশী দেশে হামলা চালাচ্ছে এমন কোনও গোষ্ঠী পাকিস্তানে ঘাঁটি গাড়তে চাইলে তাদেরই নিকেশ করতে হবে।

সম্প্রতি চিনে জি-২০-এর মঞ্চে মোদী বলেছিলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশই সন্ত্রাসের এজেন্টদের ছড়িয়ে দিচ্ছে।’’ লাওসের রাজধানী ভিয়ান্তিয়ানে আসিয়ানের মঞ্চে প্রায় একই সুরে বলেছেন, ‘‘এক দেশ থেকে অন্য দেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মৌলবাদ ও হিংসার প্রসার ঘটছে। এটা আমাদের সকলের পক্ষেই ক্ষতিকর।’’ তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয়-তিন স্তরেই সন্ত্রাস ও মৌলবাদ ছড়াচ্ছে। এই প্রবণতা রুখতে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি।

ভিয়ান্তিয়ানে আসিয়ান বৈঠকের ফাঁকে আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। এ দিনই সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের পাশে‌ দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। মার্কিন বিদেশ দফতরের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, সব জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে ইসলামাবাদকে চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন। আমেরিকা পাকিস্তানকে সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিবেশী দেশে সক্রিয় এমন সব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দীর্ঘ দিন ধরেই ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান কিছু জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। কিন্তু ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে মদত দেয় পাক সেনা ও আইএসআই। আমেরিকা কার্যত এ দিন সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিল বলে মনে করা হচ্ছে। কূটনীতিকদের মতে, মার্কিন চাপ সত্ত্বেও লস্কর, জইশ বা হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে এখনই পাকিস্তানের পদক্ষেপ করার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

তবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এই ‘রণ‌ং দেহি’ চেহারার সঙ্গে মোদী জমানার শুরুর দিনগুলিকে মেলাতে কষ্ট হচ্ছে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও সাউথ ব্লকের কর্তাদেরই।

বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, মোদী শপথ নেওয়ার আগেই পাকিস্তানের সঙ্গে ত্রিস্তরীয় আলোচনা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন থেকেই শরিফ সরকারের সঙ্গে মোদী প্রশাসনের মধুচন্দ্রিমা শুরু হয়। এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘তখন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরের সময়ে দিল্লির সব দাবি মেনে নিয়েছিলেন শরিফ। এমনকী পাক সেনার প্রতিনিধি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসির খান জনজুয়ার হাত ধরে শরিফ সুষমার সব দাবি মানার অনুরোধ করেছিলেন।’’ কূটনীতিকদের মতে, ভারতের জন্য কোনও পাক প্রধানমন্ত্রীর এমন দরদ বিরল। তেমনই কাবুল সফর থেকে ফেরার পথে শরিফের ডাকে প্রটোকল ভেঙে লাহৌরে ছুটে গিয়েছিলেন মোদী।

এখানেই শেষ নয়। গত মে মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন শরিফ। ব্রিটেনের হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার মুখে তিনি ফোন করেন নরেন্দ্র মোদীকে। জানান, একটু পরেই তাঁর অস্ত্রোপচার হবে। মোদী আবার তার এক দিন আগেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন শরিফকে। বলেছিলেন, ‘‘দ্রুত ভাল হয়ে উঠুন। ফের দেখা হবে।’’ বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই অস্ত্রোপচারের পরেই বদলে গেল ছবিটা।’’

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারতের সঙ্গে শরিফের ঘনিষ্ঠতা পাকিস্তানের ভারত-বিরোধী গোষ্ঠী ভাল চোখে দেখেনি। তাঁর অসুস্থতার পরেই পানামা থেকে প্রকাশিত নথিতে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থায় গোপন লগ্নিকারীদের নাম জানা যায়। তাতে শরিফের পরিবারের সদস্যদের নাম ছিল। শরিফ পরিবার এ ভাবেই নিজেদের কালো টাকা বিদেশে সরিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল শরিফকে কোণঠাসা করতে শুরু করে পাক সেনা। শরিফ কাশ্মীরকে অবহেলা করছেন বলেও অভিযোগ করেন বিরোধীরা। ফলে অস্তিত্ব রক্ষা করতেই সুর চড়াতে থাকেন শরিফ।

কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির পরে কাশ্মীর নিয়ে লড়াইকে কার্যত নজিরবিহীন স্তরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় পাকিস্তান। যে শরিফ দিল্লির দাবি মেনে আলোচনা করছিলেন, তিনিই কাশ্মীরের পাকিস্তানভুক্তির কথা বলতে থাকেন। পাল্টা হিসেবে দেশ-বিদেশে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে উদ্যোগী হয় দিল্লিও।

এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘এখন মোদীকে ফোন করলে হয়তো গদিই হারাবেন শরিফ। সেটা আর কে চায় বলুন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Pakistan barack obama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE