আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল কত শতাংশ ভোট পেতে পারে, সে বিষয়ে বুধবার প্রকাশিত হল একটি জনমত সমীক্ষার রিপোর্ট। তার ফল বলছে, এখন ভারতের পড়শি দেশের ভোটারদের সবচেয়ে পছন্দের দল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। অন্য দিকে, গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একাংশের তৈরি নতুন দল এনসিপির প্রতি সমর্থন কার্যত অকিঞ্চিৎকর।
বুধবার রাজধানী ঢাকার জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে ‘জনগণের নির্বাচন–ভাবনা’ শীর্ষক জনমত সমীক্ষার দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে ‘ইনোভিশন কনসাল্টিং’ নামে একটি ভোট পর্যবেক্ষণ সংস্থা। সহযোগিতা করেছে নাগরিকমঞ্চ ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ ও ‘বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক’ (বিআরএআইএন)। সমীক্ষার ফলাফল জানাচ্ছে, বাংলাদেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে ছ’টি বিভাগের ভোটদাতারা বিএনপির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কট্টরপন্থী জামায়াত-ই-ইসলামি (সে দেশের রাজনীতিতে ‘জামাত’ নামে পরিচিত) এবং গত বছরের অগস্টে গণবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে একটি করে বিভাগে।
আরও পড়ুন:
বিএনপি এগিয়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে। জামায়াতে এগিয়ে রয়েছে রংপুর বিভাগে। আর বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে ‘নিষিদ্ধ দল’ আওয়ামী লীগ। জনমত সমীক্ষার ফলাফলে স্পষ্ট, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের আমজনতার একাংশের এখনও নীরব সমর্থন রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের প্রতি। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৩৯.১ শতাংশ ভোটদাতা মনে করেন, আগামী সরকার গঠনের জন্য সবচেয়ে যোগ্য দল বিএনপি। জামায়াতকে যোগ্য মনে করেন ২৮.১ শতাংশ। ১৭.৭ শতাংশ ভোটদাতা সরকার চালানোর জন্য যোগ্যতম মনে করেন আওয়ামী লীগকে। আর এনসিপি-কে? মাত্র ৪.৯ শতাংশ!
গত বছরের অগস্টে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘিরে দানা বাঁধা প্রবল জনবিক্ষোভের জেরে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা। সেই আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনত আবদুল্লার মতো ছাত্রনেতারা পরবর্তী কালে এনসিপি গড়েন। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি জামায়াতে নেতৃত্বের সঙ্গেও নাহিদদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ইতিহাস বলছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাত নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে পাকিস্তান সেনার পক্ষে কাজ করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম সেই ইতিহাস মনে রাখেনি বলেই ইঙ্গিত জনমত সমীক্ষায়। কারণ জামায়াতের সমর্থকদের বড় অংশই নতুন প্রজন্মের ভোটদাতা। অন্য দিকে, বয়স্ক ৪০ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের বেশিরভাগেরই পছন্দ বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগকে।