স্থায়ী সংঘর্ষবিরতির লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তানবুলে তৃতীয় দফার বৈঠকে বসলেন পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেই বৈঠক চলাকালীনই আফগানিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলার অভিযোগ উঠল পাকিস্তান সেনার বিরুদ্ধে। আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী মৌলভি মহম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদের দফতর সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছে, বিনা প্ররোচনায় একতরফা হামলা চালিয়েছে পাক ফৌজ।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, পাক হামলার জবাবে তারা প্রত্যাঘাত করেনি। এক আফগান আধিকারিক এএফপি-র প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘ইস্তানবুল বৈঠকের প্রতি সম্মান জানাতে আমরা কোনও পাল্টা হামলা করিনি।’’ প্রসঙ্গত, এর আগে এর আগে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমন ও সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করার লক্ষ্যে গত ২৫ অক্টোবর থেকে পাক-আফগান দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসেছিল ইস্তানবুলে। সূত্রের খবর, সেখানে পাকিস্তানের তরফে আফগানিস্তানের মাটিতে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-সহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর উপর নজরদারি চালানোর দাবি তোলা হয়। পাশাপাশি, আফগানিস্তানের তালিবান শাসকদের কাছে টিটিপি (পাক সরকার এবং সেনা যাদের ‘ফিতনা আল খোয়ারিজ়’ বলে চিহ্নিত করে)-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি তোলে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন:
জবাবে পাক ফৌজের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের সীমান্ত লঙ্ঘন এবং বিমানহামলার অভিযোগ তোলেন তালিবান প্রতিনিধিরা। আফগান সূত্র জানিয়েছে, এই বিষয়ে ‘উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের’ পর আলোচনা কার্যস্ত ভেস্তে গিয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে কাতার এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় তৃতীয় দফার বৈঠকে সম্মত হয়েছিল ইসলামাবাদ ও কাবুল। কিন্তু তার সূচনাপর্বেই পাক হামলায় তৈরি হল সংশয়। অক্টোবরের গোড়ায় সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়েছিল পাক ও আফগান সেনা। হামলা-পাল্টা হামলায় দু’দেশের সেনা এবং সাধারণ নাগরিক মিলিয়ে শতাধিক মৃত্যু হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, আফগান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফর শুরুর দিন, গত ৯ অক্টোবর পাক বিমানহামলা হয়েছিল কাবুলে।
কাতার এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় প্রথম দফায় দোহায় আলোচনায় বসেছিলেন পাক-আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কয়েক জন শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তা। সেই সময়ে প্রাথমিক ভাবে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছিল দুই দেশ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতারা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানিয়েছিলেন। কথা ছিলই এই শান্তি আলোচনাপর্ব আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই মতো দ্বিতীয় দফায় ইস্তানবুলে আলোচনায় বসেছিলেন দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। কিন্তু পাঁচ দিনের মাথায় সেই শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় গোটা এলাকায় শান্তি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পিছনে দিল্লির মদত আছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন সে সময়।