উত্তেজনার আবহেই শান্তির প্রয়াস। আফগানিস্তানের মাটিতে পাক বিমানহানা এবং খাইবার পাখতুনখোয়া, বালোচিস্তান থেকে পাশতুন শরণার্থীদের বিতাড়ন নিয়ে ইসলামাবাদ-কাবুল সংঘাতের পারদ ক্রমশ চড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের শাসক তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে উদ্যোগী হল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার।
পাক উপপ্রধানমন্ত্রী ইশাক দার শনিবার এক দিনের সফরে আফগানিস্তানে গিয়েছেন। তালিবান সরকারের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি এবং সমস্যার ক্ষেত্রগুলি নিয়ে তাঁর আলোচনা হবে বলে পাক সরকার জানিয়েছে। আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দ এবং উপপ্রধানমন্ত্রী আব্দুল গনি বরাদরের সঙ্গেও বৈঠক করবেন ইশাক। ঘটনাচক্রে, তালিবানের অন্দরে ‘পাক-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হক্কানির সঙ্গে বৈঠকের কোনও সূচি নেই পাক উপপ্রধানমন্ত্রীর।
সাড়ে তিন বছর আগে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে তালিবানকে সহায়তা করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু গত দু’বছরে পাক-আফগান দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়া ‘বেআইনি বিদেশি নাগরিক প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি’তে পাকিস্তান এ পর্যন্ত আট লক্ষ আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে। পাক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাল্লাল চৌধরি সম্প্রতি আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সব ‘অবৈধ অভিবাসী’ এবং ‘আফগান সিটিজ়েন কার্ড’ধারীদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণা করেছেন। যা নিয়ে নতুন করে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
পাশাপাশি, শাহবাজ সরকারের অভিযোগ, তালিবান শাসকদের একাংশের মদতপুষ্ট তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং বালোচ বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নাশকতা চালাচ্ছে। এই আবহে ইশাকের সফর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হতে পারে। প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেও রাষ্ট্রপুঞ্জে স্বীকৃতি পায়নি তালিবান সরকার। ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন-সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সঙ্গেই তাদের স্বীকৃত কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি সম্প্রতি ‘ট্র্যাক টু’ (সমান্তরাল) কূটনীতির মাধ্যমে কাবুলের শাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছে। যা ইসলামাবাদের চিন্তা বাড়িয়েছে বলেই কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা।