ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে কি দেখা করলেন রাজপরিবারের ছোট ছেলে হ্যারি? এই নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন এবং গুঞ্জনের মাঝেই ব্রিটেনে ফিরেছেন প্রিন্স হ্যারি। সোমবার তাঁর ঠাকুরমা রানি এলিজ়াবেথের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ওই দিন গুরুতর অসুস্থ শিশুদের জন্য এক বাৎসরিক দাতব্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন হ্যারি। মূলত এই কর্মসূচির জন্যই ব্রিটেনে পৌঁছেছেন তিনি।
ব্রিটেনের রাজপরিবারকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। হ্যারি অভিনেত্রী মেগান মার্কলকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই অশান্তি লেগেই ছিল রাজপরিবারে। রাজপরিবারের ‘অংশ’ হলেও, শ্বেতাঙ্গ না হওয়ায় মেগানকে কোনও দিনই রাজপরিবারের ‘সদস্য’ হিসাবে গণ্য করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন হ্যারি। এই আবহে ২০২০ সালের গোড়ায় ব্রিটিশ রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে আসেন হ্যারি ও মেগান। আমেরিকায় থাকতে শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর ঠিকানা ক্যালিফর্নিয়ার মনটেসিটো শহর।
তবে মাস চারেক আগে সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন হ্যারি। বস্তুত, রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে আসার পরে তাঁর নিরাপত্তায় কিছু কাঁটছাঁট করা হয়েছিল। তা নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। তবে বিবিসির প্রতিনিধিকে হ্যারি জানিয়েছিলেন, তিনি আর এ সব নিয়ে আইনি লড়াই চান না। রাজপরিবারের সঙ্গে ‘পুনর্মিলন’ চান। ফিরতে চান ব্রিটেনে। রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রসঙ্গেও তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি আর এই ঝগড়াঝাঁটি চাই না। বাবা আর কত দিন আছেন, তা-ও জানি না।’’
ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস ক্যানসারে আক্রান্ত। গত মে মাসে বাবার প্রসঙ্গে হ্যারির ওই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই তাঁদের সম্ভাব্য সাক্ষাৎ নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়। এ অবস্থায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলি মনে করছে, হ্যারির ব্রিটেন সফর ৭৬ বছর বয়সি চার্লসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের পথ প্রশস্ত করতে পারে। রাজপরিবারের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব ঘোচাতেও সাহায্য করতে পারে এই সফর।
আরও পড়ুন:
‘পিপ্ল’ সাময়িকীতে ব্রিটিশ রাজপরিবারের খবর নিয়ে কাজ করা সাইমন পেরি বলেন,“হ্যারি তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে কথাবার্তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।” যদিও দু’জনের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। পেরির কথায়, “চার্লস এবং হ্যারির মধ্যে (ভৌগোলিক) দূরত্ব যখন কম থাকবে, যখনই তাঁরা এক দেশে থাকবেন, তখনই এই ধরনের আলোচনা হবে।”
সম্ভাব্য সাক্ষাতের জল্পনা নিয়ে মুখে কুলুপ প্রিন্স হ্যারির মুখপাত্রেরও। অন্য দিকে ব্রিটিশ রাজপরিবারও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করছে না। বাকিংহাম প্যালেস জানিয়ে দিয়েছে, ব্যক্তিগত পারিবারিক বিষয়ে তারা কখনও বাইরে আলোচনা করে না। রাজা তৃতীয় চার্লস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর পরই গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন হ্যারি। তার পর থেকে বাবা-ছেলের আর কোনও দেখা হয়নি।
বস্তুত, রাজপরিবারের থেকে আলাদা হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এবং নিজের আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’-এ রাজপরিবারের সমালোচনা করে এসেছেন হ্যারি। কখনও বাবা তৃতীয় চার্লস, কখনও দাদা প্রিন্স উইলিয়ামের বিষয়ে কড়া মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে গত মে মাসে বিবিসির প্রতিনিধির সঙ্গে হ্যারির কথোপকথনের পর থেকেই সম্ভাব্য সাক্ষাৎ নিয়ে গুঞ্জন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর পরে গত জুলাই মাসে রাজা তৃতীয় চার্লসের যোগাযোগ দফতরের প্রধান এবং হ্যারির মিডিয়া প্রতিনিধিদের একটি গোপন বৈঠকের ছবি প্রকাশ্যে আসে। অনেকেই মনে করছিলেন, হ্যারির রাজপরিবারে ফেরার পথে তা প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি কোনও পক্ষই!