দু’পক্ষের প্রতিনিধিরা ইস্তানবুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন বৃহস্পতিবারেই। তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী হাকান ফিদানের উপস্থিতিতে দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের সৌজন্য-সাক্ষাতের পর্বও সাঙ্গ হয়েছিল। শুক্রবার সরকারি ভাবে ইস্তানবুলের রয়্যাল প্যালেসে কোনও মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে প্রথম বার দু’তরফের মুখোমুখি আলোচনা শুরু হল, ইউক্রেনে রুশ হামলার ১১৭৭তম দিনে।
তুরস্কের বৈঠকে রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেডিনস্কি। অন্য দিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভকে প্রতিনিধিদলের নেতা হিসাবে ইস্তানবুলে পাঠিয়েছেন। জ়েলেনস্কি নিজে তুরস্কে হাজির থাকলেও প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় যোগ দেননি। অন্য দিকে, আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো শুক্রবার সকালেই তুরস্কে পৌঁছেছেন। রুশ-ইউক্রেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি হাজির থাকবেন না। তবে আলাদা ভাবে দু’দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় কিভের বিরুদ্ধে ‘সামরিক অভিযানের’ ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইউক্রেনের ‘নির্দিষ্ট ৭০টি লক্ষ্যে’ (মস্কোর বিবৃতি অনুযায়ী) ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানহামলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী। পাশাপাশি, স্থল এবং জলপথেও শুরু হয়ে গিয়েছিল আগ্রাসন। ডনবাস-রাশিয়া সীমান্তের পাশাপাশি বেলারুশে মোতায়েন রুশ ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া ব্রিগেডগুলি হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছিল ইউক্রেনের মাটিতে। সেই সঙ্গে, ইউক্রেনের উপকূলবর্তী শহর ওডেসা এবং মারিয়ুপোল দখলের লক্ষ্যে ক্রাইমিয়া বন্দর এবং কৃষ্ণসাগরে মোতায়ন রুশ রণতরী এবং ‘অ্যাম্ফিবিয়ান ল্যান্ডিং ভেহিকল’ থেকে সেনা অবতরণ শুরু হয়ে যায়। রুশ হামলার দ্বিতীয় দিনেই পতনের মুখে দাঁড়িয়েছিল ইউক্রেনের পরিত্যক্ত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চেরনোবিল। ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসাবে পরিচিত ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল রুশ ফৌজ। এমনকি, বেলারুশ সীমান্ত পেরিয়ে আসা রুশ বাহিনীর একাংশ পৌঁছে গিয়েছিল রাজধানী কিভের শহরতলিতে! সীমিত ক্ষমতা নিয়েও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কির সেনা রুখে দাঁড়িয়েছিল সে সময়। প্রাথমিক একতরফা হানা পরিণত হয়েছিল পুরোদস্তুর যুদ্ধে।
আরও পড়ুন:
বিশ্বের অন্যতম মহাশক্তি রাশিয়াকে যে ইউক্রেন সেনা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে, তা কল্পনা করতে পারেননি সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেই কিভকে দেওয়া ওয়াশিংটনের সামরিক সাহায্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইউরোপের দেশগুলির সহায়তায় এখনও লড়াই চালিয়ে গেলেও গত চার মাসে বেশ কিছু এলাকা হাতছাড়া হয়েছে ইউক্রেন সেনার। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির জন্য জ়েলেনস্কি সরাসরি তুরস্কের মাটিতে পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবদনে সাড়া দেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। তাই বৈঠকের সাফল্য নিয়ে সন্দিহান পশ্চিমি দুনিয়া। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় পৌঁছে রুবিয়ো শুক্রবার বলেন, ‘‘আলোচনাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে প্রথমেই চূড়ান্ত সাফল্য মিলবে, এমন আশা করা ঠিক নয়।’’