E-Paper

কখনওই যুদ্ধ চাননি রাশিয়ার মানুষ, মস্কো থেকে লিখলেন প্রদ্যোৎ মুখোপাধ্যায়

এক বছরের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তার ঘাত-প্রতিঘাত, দুইদেশের মানুষের অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলতে গেলেই আমার বার বার আমাদের দেশভাগের কথা বলতে ইচ্ছে হয়।

প্রদ্যোৎ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৮
War Tank of Russia at Ukraine

এই যুদ্ধ চাননি মস্কো বাসিন্দারা। — ফাইল চিত্র।

কখনওই যুদ্ধ চাননি রাশিয়ার সাধারণ মানুষ

স্কুলের লেখাপড়া কলকাতায় শেষ করে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে পা রাখি। হ্যাঁ, তখনও রাশিয়া নয়, দেশটার নাম ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখনও সব আলাদা আলাদা দেশ হয়ে যায়নি। তার পর, ওই একই বছর সব আলাদা আলাদা দেশে ভাগ হয়ে গেল। সেই সময় থেকে বর্তমানের যুদ্ধের সময়, সবই দেখছি চোখের সামনে।

এই এক বছরের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তার ঘাত-প্রতিঘাত, দুইদেশের মানুষের অভিজ্ঞতার বিষয়ে বলতে গেলেই আমার বার বার আমাদের দেশভাগের কথা বলতে ইচ্ছে হয়। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময়ে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ঘৃণার বীজ বপন করে গিয়েছিল। তার ফলেই দেশভাগ, তার ফলেই গৃহহীন হয়েছিলেন শয়ে শয়ে মানুষ। এ প্রসঙ্গেই বলার, ভারতের সঙ্গে কিন্তু বরাবর ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং তার পরে রাশিয়াও। পশ্চিমের দেশগুলির সহমর্মিতাছিল আমাদের পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশের প্রতি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন জুড়ে ছিল, তখন ইউক্রেন-রাশিয়া ছিল এক সঙ্গে। সেই রেশ তো এখনও রয়ে গিয়েছে। দু’দেশের জীবনযাপনে তো কোনও পার্থক্য নেই। খাদ্যাভ্যাসও একই রকম। ভাষায় সামান্য কিছু তফাত রয়েছে। এ দিকে, কতগুলো বাইরের লোক, বাইরের শক্তি এসে দু’টো দেশের সৌহার্দ্যটাকেই ভেঙে দিতে চাইছে। প্ররোচনা দিচ্ছে যুদ্ধের। অথচ চোখের সামনে দেখেছি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সামাজিক যোগাযোগ কত গভীর ছিল। আমার মনে হয়, সারা বিশ্বে ইউক্রেনীয়দের যদি প্রকৃত বন্ধু কেউ থেকে থাকে, তবে তারা হল রুশ আমজনতা। আর বাইরে থেকে যারা এই যুদ্ধের প্ররোচনা দিচ্ছে, তারা চাইছে শেষ ইউক্রেনবাসীও এই যুদ্ধে নিজেকে সঁপে দিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাক। দেশটার ক্ষতি চাইছে তারা।

সত্যি কথা বলতে কি, কোনও দেশের সাধারণ মানুষই যুদ্ধ চায় না। ইউক্রেন বা রাশিয়ার জনসাধারণওএই যুদ্ধ চায় না। সকলে শান্তি চায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তো কার্যত নিজের ঘরের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ। শান্তি আনতে গেলে বিভেদের প্ররোচনার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে, যদি ‘ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা’ হয়, যদি ইউরোপের দেশগুলি এক সঙ্গে ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ হয়ে থাকতে পারে, তাহলে, এশিয়ার দেশগুলিও পরস্পরের সঙ্গে মৈত্রীভাবাপন্ন হয়ে থাকতে পারবে না কেন? বাইরের শক্তি তো নিজেদের স্বার্থে উস্কানি দেবেই।রাশিয়া ও ইউক্রেনে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বাইরের শক্তি তো সেই সম্পদ দখলের জন্য অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করবেই। আমার কেন জানি মনে হয়, বিচ্ছিন্নতাবাদের বীজ বপনের পিছনে হয়তো নব্য ঔপনিবেশিকতারই লক্ষ্য রয়েছে।

দুঃখের সঙ্গে বলি, এক বছর আগে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন রাশিয়ার মানুষও যুদ্ধ চায়নি। একবছর ধরে চলেছে পশ্চিমের কিছু সংবাদমাধ্যমের ক্রমাগত প্রচার। ‘সাহায্যের’ নামে ক্রমাগত অস্ত্রের প্রবেশ ঘটেছে দুই দেশে। এর ফলে কারও কারও মধ্যে একটু বৈষম্যমূলক চিন্তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এখনও যুদ্ধ চায় না এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ। সূক্ষ্মভাবে সেই চাহিদাই ছড়িয়ে গিয়েছে মানুষের ব্যবহারে। সেটাই হওয়ার কথা, কারণ যখন যুদ্ধ হয় তখন সাধারণ মানুষই মরে। যুদ্ধে তো হার-জিত হয় ক্ষমতাশালীদের, আখেরে ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের। সেই বিষয়টাই ভাবা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, এই যুদ্ধের বিষয়ে ভারত একেবারে যথাযথ পদক্ষেপ করেছে। আমার মনে হয়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের শান্তি স্থাপনে ভারতের ভূমিকা জরুরি হয়ে উঠবে।

অনুলিখন: শ্রেয়া ঠাকুর

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Russia Ukraine War Kyiv Moscow

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy