Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Afghanistan Crisis

Afghanistan Crisis: নানা আশঙ্কা, তবু স্কুলে গেল বাচ্চারা

এ দেশের অনেকেই ভাবেন, তালিবদের এই উত্থানের পিছনেও পাকিস্তানের হাত রয়েছে। তালিবানের প্রভাব কিন্তু পাকিস্তানেও বাড়ছে। সেটাও চিন্তার!

ভয়কে জয় করে চলছে স্কুল

ভয়কে জয় করে চলছে স্কুল ছবি: টুইটার।

মহম্মদ আসিফ সাইফি
কাবুল শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫১
Share: Save:

দিন দশেক হতে চলল আমাদের শহর তালিবানের দখলে চলে গিয়েছে। বিমানবন্দরে হুড়োহুড়ি, দেশ ছাড়তে অনেকের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেলেও এখনও বড়সড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এই দুর্ভাগা দেশের বাসিন্দারা স্রেফ এটুকুর জন্যই বার বার খোদাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। গত কুড়ি বছরে সংঘর্ষে গ্রামীণ আফগানিস্তানে আমার নিজের খুড়তুতো ভাই-সহ পরিবারের জনা পাঁচেকের প্রাণ গিয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে নাগাড়ে রক্তক্ষয় আর আতঙ্কের পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ছিটেফোঁটা শান্তির স্বাদটুকুতেই আমরা আফগানরা এখন গলে যাই!

আমি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কাবুলের টুয়েলভথ ডিস্ট্রিক্টে সপরিবার থাকি। আমার অফিস এই গোলমালের শুরু থেকেই বন্ধ। আরও অনেক বড় অফিস, ব্যবসা, বাণিজ্যও চালু হয়নি। তালিবান হেরাটে কোএড কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেছে, প্রত্যন্ত এলাকায় অল্পবয়সি মেয়েদের তালিকা তৈরি করিয়েছে, বিদেশি সাংবাদিক কেন মুখ ঢাকেননি, সে জন্য নিগ্রহ করছে— এমন ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমন রাজধানীতে এখনও পর্যন্ত মেয়েদের চলাফেরায় সামগ্রিক ভাবে বাধা সৃষ্টির বড়সড় ঘটনা চোখে পড়েনি। এখন এটাকে তালিবানের মুখ না মুখোশ, কী বলব? এখন বিশ্বের নজর আফগানিস্তানের উপরে, তাই হয়তো ভাবমূর্তি রক্ষায় নয়া শাসকেরা পুরোপুরি স্বমূর্তি ধরছে না, এমন একটা ধারণাও অনেকের রয়েছে।

আমার ছোট ছোট ছেলেরা এবং একমাত্র মেয়েটা আজ (সোমবার) স্কুলবাসে করে ইস্কুলে গেল। ওরা বেসরকারি স্কুলে পড়ে। তবে সরকারি স্কুল এখনও বন্ধ। বাচ্চারা বিকেলে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তা হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু ওরা ঠিক সময়েই ফিরে এসেছে। আপাত ভাবে ক্রমশ সব কিছুই নিস্তরঙ্গ হয়ে উঠছে। কিন্তু জানি না, এই পরিস্থিতি চলবে ক’দিন।

আবার কাবুলে তালিবানের এমন অনায়াস দখল নিয়ে আমরা বিস্মিত হলেও গ্রামীণ আফগানিস্তানে কিন্তু তালিবানের প্রভাব আগেও ছিল। আমাদের পরিবার পাকতিকা প্রদেশের শারানা জেলার হাজি আসগর গ্রামের বাসিন্দা। আমার বাবা কাবুলে ডাক্তারি করেন। কিন্তু বোনেদের শ্বশুরবাড়ি, অনেক আত্মীয়ের বাড়িই পাকতিকায়। ওই সব তল্লাটে কিন্তু গত ২০ বছরেও তালিবানেরই দাপট ছিল। সেখানে বাড়ির মেয়েদের কখনওই বাইরে ঘোরাঘুরির নিয়ম নেই।

আমাদের গ্রাম থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান। সেখানে শুনছি পাক সেনা ছাউনিতেও তালিবানি প্রভাব। এ দেশের অনেকেই ভাবেন, তালিবদের এই উত্থানের পিছনেও পাকিস্তানের হাত রয়েছে। তালিবানের প্রভাব কিন্তু পাকিস্তানেও বাড়ছে। সেটাও চিন্তার!

২০১৪ সাল পর্যন্ত আমি ভারতে বহু বার গিয়েছি। কিছু কাপড়ের ব্যবসার কাজে সুরাতে গিয়েছিলাম। কলকাতায় তো কাছের আত্মীয়রাই রয়েছে। ভারতকে খুব ভালবাসি, কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি থেকে পটনা বা ঝরিয়ার মতো শহরেও ঘুরেছি। জানি না, সেই দিনগুলো ফিরবে কবে! মনে হচ্ছে না, দেশের ভিতরে কোনও শক্তিই পারবে তালিবান শাসকদের সঙ্গে টক্কর দিতে। এ দেশে হেরাট, গজ়নি, খোশ্ঠ, নঙ্গরহাড়ে হিন্দু, শিখদের অনেকের সঙ্গেই আমাদের সদ্ভাব। আফগানরা তাঁদেরও নিজের ভাই ভাবেন। এই পটপরিবর্তনে অনেকেরই চিন্তা, দেশে মানবাধিকার ঠিকঠাক থাকবে তো? আফগানিস্তান কি পারবে অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে? আশা করব, বিদেশি সেনারা আফগানিস্তান ছাড়লেও আন্তর্জাতিক মহল আমাদের দেশটা থেকে একেবারে চোখ ফিরিয়ে নেবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan Crisis Taliban 2.0
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE