থাকসিন ও ইঙ্গলাক শিনাবাত্রা
দিন সাতেক আগের কথা। আদালতে বিচার ঘোষণার ঠিক আগের দিন রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যান দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তাইল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গলাক শিনাবাত্রা। কোথায় লুকিয়ে থাকতে পারেন সেই নিয়ে অবশ্য জমে উঠেছিল জল্পনা। সড়কপথে সীমান্ত পেরিয়ে কম্বোডিয়া নাকি ব্যক্তিগত বিমানে সিঙ্গাপুর— কোথায় তিনি পালিয়েছেন তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত ছিল। কিন্তু বুধবার ইঙ্গলাকের ভাই, তাইল্যান্ডের আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিনের টুইট আসতেই জল্পনা জোরদার হল। বিরোধীরা বলতে শুরু করেছেন, ইঙ্গলাক নিশ্চয় থাকসিনের কাছে দুবাইতেই গিয়েছেন।
দিদির উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে সরাসরি কিছুই বলেননি ভাই। বরং অষ্টাদশ শতকের ফরাসি দার্শনিক শার্ল দ্য মঁতেস্কুর একটি উদ্ধৃতি টুইট করেছেন থাকসিন। লিখেছেন, ‘‘বিচারের নামে অবিচারের চেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা আর হয় না।’’ বিরোধীদের মতে, ভাইয়ের এই টুইটেই রয়েছে শিনাবাত্রা নিখোঁজ রহস্যের চাবিকাঠি।
তাইল্যান্ডের প্রাক্তন এক আমলার কথায়, দ্ব্যর্থবোধক টুইটটি পোস্ট করে আসলে দেশের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন থাকসিন। মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরাও।
তাইল্যান্ডের রাজনীতিতে গত দু’দশকের ওঠাপড়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শিনাবাত্রা পরিবারের এই ভাই-বোনের উত্থান-পতনও। নব্বইয়ের দশকে রাজনীতির আঙিনায় পা-রাখা ধনী ব্যবসায়ী থাকসিন ২০০১-এ প্রধানমন্ত্রী হন। পাঁচ বছরেই বদলে দিয়েছিলেন তাইল্যান্ডের নকশা। পরের নির্বাচনে ফের বিপুল জয়। তবে মেয়াদ ফুরনোর আগেই সামরিক অভ্যুত্থানে গদিচ্যুত। দুর্নীতির অভিযোগও ছিল। এক রকম পালিয়ে গিয়েই দুবাইয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন থাকসিন।
২০০৬-এ নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন দিদি ইঙ্গলাক। কিন্তু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ২০১৪ সালে দুর্নীতির অভিযোগে গদি ছাড়তে হল তাঁকেও। দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গলাক অবশ্য এই অভিযোগকে বিরোধীদের অপপ্রচার বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। আদালতে আপাতত সেই মামলাই চলছে। গত সপ্তাহেই ছিল বিচারের চূড়ান্ত শুনানি। দু’দিন আগেও ইঙ্গলাকের হাবেভাবে কেউ টের পাননি যে তিনি উধাও হতে পারেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের খাইয়ে, মন্দিরের জলে মাছ ছেড়ে মঙ্গল কামনা করেছেন। পাছে দেশ ছাড়েন, কড়া নজর ছিল। তবু শেষরক্ষা হয়নি। এ বার বাকি জীবনটা ভাইয়ের মতোই স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকেন নাকি রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা চালান ইঙ্গলাক, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy