আগুং আগ্নেয়গিরি
শুধু বালির আকাশই নয়, আগুং আগ্নেয়গিরির কালো ছাই উড়তে উড়তে গিয়ে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় তিয়ার্না টমসনের বিয়ের রঙিন স্বপ্নও ঢেকে দিয়েছে। বালিতে যে দিন তিয়ার্না ও জাস্টিনের বিয়ের আসর বসার কথা, সেই ২৭ নভেম্বরই জেগে উঠেছিল মাউন্ট আগুং। আগুং জেগে উঠবে, সেই লক্ষণ দেখে দিন দুই আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বালির বিমানবন্দর। ৪৫০-র কাছাকাছি উড়ান বাতিল হয়েছিল। বালি পৌঁছতেই পারেননি বর-কনে। তড়িঘড়ি বিয়ের আসর সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাইল্যান্ডে। আগ্নেয়গিরি কী ভাবে মানুষের জীবন পালটে দিতে পারে, দেখে কৌতুক অনুভব করেছেন বছর চব্বিশের কনে তিয়ার্না। বলেছেন, ‘‘৫৪ বছর পর জেগে ওঠার জন্য আগ্নেয়গিরিটাকে আমাদেরই বিয়ের দিন বেছে নিতে হল?’’
তবে আগুংয়ের এই আগুন-কাণ্ডে হাসি উড়ে গিয়েছে বালির পর্যটন-ব্যবসায়ীদের মুখ থেকে। গোটা পর্যটন-শিল্পকেই ঝলসে দিয়েছে আগুং। ওয়েডিং প্ল্যানার, ডাইভিং-প্রশিক্ষক, হোটেল-কর্মীরা
ব্যবসা বন্ধ করে মাথা চাপড়াচ্ছেন। কৃষকরা জলের দরে নিজেদের সম্বল বেচে পালাচ্ছেন। ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনমন্ত্রী আরিফ ইয়াগহা জানান, বছরের শেষেও আগুং যদি শান্ত না হয়, তবে শুধু পর্যটন ক্ষেত্রে ৬৬.৫ কোটি ডলারের ক্ষতির বোঝা চাপবে দেশের ঘাড়ে।
বুধবার বালির মূল বিমানবন্দর চালু হলেও, সেখানে দ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার লাইন বেশি। যে দ্বীপে লক্ষ পর্যটকের ভিড় লেগে থাকত প্রবাল দেখা, ডাইভিংয়ের আকর্ষণে, সৈকতে বসত রোম্যান্টিক বিয়ের আসর, সেখানে শুধুই আজ সব পরিকল্পনা বাতিলের ঢেউ উঠছে। শেষ মুহূর্তে বিয়ে বাতিল করে বিপুল লোকসান বইছেন মানুষ। দশ ভাগের এক ভাগ হয়ে গিয়েছে পর্যটক সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, ছোট ছোট করে উদ্গীরণ করেও থামেনি আগুং। এখনও বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে। পাশের সুমাত্রা দ্বীপে মাউন্ট সিনাবার্গ তো সব জ্বালিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে কবে থেকেই। ২০১৩ থেকে সেখানে সতর্কতা রয়েছে। বালি পর্যটন দফতরের প্রধান বলেছেন, তিন দিন বন্ধ ছিল বিমানবন্দর। তাতেই ক্ষতির অঙ্ক বালির টাকায় পনেরো কোটি। প্রকৃতির রোষের সামনে কীই বা করা! আগ্নেয়গিরির মর্জির ওপরই নির্ভর করছে সকলের ভাগ্য।
ক্ষতিগ্রস্ত বালির দৈনন্দিন জীবনও। হাজার হাজার গ্রামবাসী তাঁদের আস্তানা ও জীবিকার সম্বল ছেড়ে প্রাণটুকু নিয়ে ত্রাণশিবিরে এসে উঠেছেন। হাজির ঠগবাজরাও। মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে, নানা গুজব রটিয়ে জলের দরে কিনে নিচ্ছে গ্রামের মানুষের কষ্টের সম্পত্তি।
আধিকারিকদের সমস্যার শেষ নেই। এক দিকে, ভিটেমাটিতে না ফেরার জন্য গ্রামবাসীদের বোঝানোর কঠিন কাজটা করতে হচ্ছে। অন্য দিকে, কাছে গিয়ে আগ্নেয়গিরি দেখার শখ থেকে নিরস্ত করতে হচ্ছে অত্যুৎসাহীদের। পরিস্থিতি বিচারে, বাঁচার জন্য নতুন পথের হদিস দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার কিছু সংস্থা। তাঁরা মাউন্ট আগুংকে ‘ডিজাস্টার ট্যুরিজম’ হিসেবে তুলে ধরার কথা বলছেন। উদাহরণ দেখাচ্ছেন আইসল্যান্ডে মাউন্ট এইয়াপেয়লায়োকুল-কে। তবে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়স্থলকে পর্যটনের জন্য বিপণন করতে গেলে তার ঝুঁকি ও দায়িত্ব অনেক বেশি। দরকার পোক্ত পরিচালনসমিতি। বিপদসঙ্কেতের ফলক থাকা ও তাকে মানার দিকে কড়া নজর রাখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy