Advertisement
০৫ মে ২০২৪

রাসায়নিক বোমা কি তুরস্কের

সিরিয়ায় আইএস নিধনের নামে চলতি বছরের গোড়াতেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল। এ বার আঙুল উঠল আঙ্কারার দিকে।

ব্যান্ডেজবন্দি: রাসায়নিক হামলায় জখম শিশু। সিরিয়ার এক হাসপাতালে। সোশ্যাল মিডিয়া

ব্যান্ডেজবন্দি: রাসায়নিক হামলায় জখম শিশু। সিরিয়ার এক হাসপাতালে। সোশ্যাল মিডিয়া

সংবাদ সংস্থা
বেরুট শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:২৭
Share: Save:

কোমরের উপর থেকে শুরু করে গলা, বুক সব ঝলসে গিয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ককিয়ে উঠল বছর বারোর ছেলেটি— ‘‘বাবা, তোমার পায়ে পড়ছি, কিছু করো। যন্ত্রণাটা কমিয়ে দাও প্লিজ, আর পারছি না যে!’’ সীমান্তের সিরীয় শহর রাস আল-অইনের সেই হাসপাতালের করিডর ধরে তখনও ছুটেই চলেছেন অসহায় বাবা। অন্তত মরফিনের একটা ডোজ় তো পড়ুক ছেলেটার! শেষমেশ ওষুধ জুটলও। কিন্তু তত ক্ষণে ১২ ঘণ্টা যন্ত্রণা ভোগ করা হয়ে গিয়েছে কিশোরের। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে এমন জ্বালা-পোড়া নিয়ে ছেলে-বুড়ো-মেয়ের ভিড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে হাসপাতালে। ফের রাসায়নিক হামলার নিশানায় সিরিয়া। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মাঠে নেমে পড়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাদের রাসায়নিক অস্ত্র-বিরোধী সংগঠনের অফিসারেরা আজ জানান, নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে।

সিরিয়ায় আইএস নিধনের নামে চলতি বছরের গোড়াতেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল। এ বার আঙুল উঠল আঙ্কারার দিকে। সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ, কুর্দদের ভিটেছাড়া করতে জেনিভা চুক্তির শর্ত ভেঙে এ বার সাদা ফসফরাস, নাপাম বোমা ফেলছে তুরস্ক। স্থানীয় একাধিক মানবাধিকার সংগঠন আবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীকেই এই হামলার জন্য কাঠগড়ায় তুলছে।

কিন্তু এই জ্বালা-পোড়া আর ক্ষত যে রাসায়নিক হামলা থেকেই, সে বিষয়ে নিশ্চিত হামিশ ডি-গর্ডনের মতো একাধিক রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞেরা। গর্ডনের কথায়, ‘‘ক্ষত দেখে মনে হচ্ছে, নির্ঘাত সাদা ফসফরাস। এটা চামড়ার সঙ্গে সেঁটে যায়, আর জলের স্পর্শ পেলেই জ্বলে ওঠে।’’ বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন— এই ধরনের সাদা ফসফরাস মূলত বিস্ফোরক তৈরিতে লাগে। তাই সরাসরি এর প্রয়োগে শুধু অঙ্গহানি নয়, নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে পুরো শরীরটাই। এই ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখেই রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় জেনিভা চুক্তিতে। অথচ সিরিয়ায় একাধিক বার তা প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে— কখনও আসাদ বাহিনী, তো কখনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এ বার বেছে বেছে কুর্দ ঘাঁটি লক্ষ্য করেই তুরস্ক এই হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সের (এসডিএফ)। স্থানীয় কুর্দ সংবাদমাধ্যম সেই রাসায়নিক হামলার প্রমাণ হিসেবে আজ এমন যন্ত্রণাকাতর শিশু-কিশোরদের বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে। সেখামে দেখা যাচ্ছে, কারও মুখ পর্যন্ত জ্বলে গিয়েছে। কারও আবার দগদগে শরীরের পুরোটাই ঢাকা ব্যান্ডেজে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় থেকে কুখ্যাত নাপাম বোমাও যে লাগাতার পড়ছে, তা-ও নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। তবে গত কাল রাত থেকে তুরস্ক সংঘর্ষবিরতিতে ‘রাজি’ হওয়ার পরে এই ধরনের রাসায়নিক বোমা হামলা সিরিয়ার কোথাও হয়েছে কি না, সে খবর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE