ঠিক আড়াই মাসের মাথাতেই আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নিশানায়’ ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই দুই পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এ বার তা এক ধাক্কায় বাড়িয়ে তা ৫০ শতাংশ করার বার্তা দিলেন।
আগামী বুধবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। শুক্রবার পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত মার্কিন ইস্পাত শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করবে। চিনের উপর নির্ভরতা কমাবে এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে মজবুত করবে।’’ ইউএস স্টিল এবং জাপানের সংস্থা নিপ্পন স্টিলের যৌথ উদ্যোগে ওই এলাকায় ইস্পাত উৎপাদনে ১৪০০ কোটি ডলার (প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজাকর কোটি টাকা) বিনিয়োগ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প নিজে চিনকে নিশানা করলেও তাঁর এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব ভারতেও পড়বে যথেষ্টই। ভারত থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের (প্রায় ২৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা) ইস্পাত আমদানি করে আমেরিকা। অ্যালুমিনিয়াম রফতানির পরিমাণ তার চেয়ে কিছুটা কম। গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাতজাত পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ঘোষণার পরে এপ্রিলে এই বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা চেয়েছিল ভারত। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়নি ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুন:
অন্য দিকে, ২০২৪ সালে চিন থেকে ১৩১৭ কোটি ডলারের (প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা) ইস্পাত-পণ্য আমদানি করেছিল আমেরিকা। বেজিংই বর্তমানে ট্রাম্পের দেশে বৃহত্তম ইস্পাত সরবরাহকারী। এ ছাড়া প্রথম সারিতে রয়েছে, ব্রাজিল, মেক্সিকোর মতো দেশ। অন্য দিকে ২০২৪ সালে চিন ৩ কোটি ডলারের (প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা) অ্যালুমিনিয়াম রফতানি করেছিল আমেরিকায়। কানাডা থেকে সবচেয়ে বেশি অ্যালুমিনিয়াম আমদানি করে ওয়াশিংটন, প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালে জো বাইডেন প্রশাসনের আমলে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যুক্তিতে ভারতের কয়েকটি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপরে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা।
এর পাল্টা হিসেবে ২০১৯ সালের জুনে আমন্ড, ওয়ালনাট-সহ আমেরিকার ২৮টি পণ্যের উপরে শুল্ক চাপায় ভারত। একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করে দিল্লি। এর পরে ২০২০ সালে আপসের মাধ্যমে এই বিবাদের মীমাংসার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। শুল্ক প্রত্যাহার করে দু’পক্ষই। আমেরিকার বাজারে ভারতীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম প্রবেশের অনুমতি পায়। কিন্তু ট্রাম্পের জমানায় নতুন করে শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে টানাপড়েন। গাড়িশিল্পের বিষয়ে ওয়াকিবহাল এমন ব্যক্তিদের একাংশের মতে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে আমেরিকার চড়া শুল্কের জেরে সারা বিশ্বে এই দুই কাঁচামালের চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য কিছুটা বিঘ্নিত হবে। বাড়তি শুল্কের জেরে আমেরিকার বাজারে গাড়ির দাম বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।