তাইওয়ানকে ঘিরে চিন-জাপান উত্তেজনা প্রশমনে এ বার সক্রিয় হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচিকে ফোন করে তিনি চিনের সঙ্গে সংঘাতে না-জড়ানোর বার্তা দিয়েছেন বলে হোয়াইট হাউসের সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
সম্ভাব্য চিনা হানাদারি ঠেকাতে বুধবার তাইওয়ানের উপকূল থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইয়োনাগুনি দ্বীপে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রস্তুতি শুরু করেছে জাপান। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ। জাপানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির তাইওয়ান নিয়ে মন্তব্যের জেরে চলতি মাসের গোড়া থেকে টোকিয়ো-বেজিং উত্তেজনার পারদ চড়ছে। দু’পক্ষই পরস্পরকে সামরিক প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
আরও পড়ুন:
চিন-জাপান বর্তমান সংঘাতের সূচনা গত ৭ নভেম্বর। তাকাইচি সে দিন জাপান পার্লামেন্টকে জানিয়েছিলেন, চিন যদি তাইওয়ান দখল করতে উদ্যোগী হয় তবে তাঁরা চুপ করে বসে থাকবেন না। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে তাইওয়ানকে সামরিক সাহায্য করা হবে।’’ এর পরেই সরাসরি সামরিক আগ্রাসনের হুমকি দিয়েছিল চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সরকার। চিনা প্রতিরক্ষা দফতর বিবৃতিতে বলে, ‘‘তাইওয়ান পরিস্থিতি নিয়ে নাক গলানো বন্ধ না করলে ‘ধ্বংসাত্মক সামরিক পদক্ষেপের’ মুখে পড়বে জাপান।’’ তার এক দিন পরেই উপকূলরক্ষী বাহিনীর রণতরী ঘিরে ফেলেছিল জাপানের সেনকাকু দ্বীপ। যদিও পরে তারা সরে যায়।
আরও পড়ুন:
এই পরিস্থিতিতে সামরিক অবস্থানগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইয়োনাগুনি দ্বীপে জাপান ফৌজের ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের উদ্যোগে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয় বুধবার। একদলীয় চিনের শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম পিএলএ ডেইলি বলেছে, ‘‘টোকিয়ো যদি তাইওয়ানে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে পুরো জাপান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে।’’ এই পরিস্থিতিতে যে ট্রাম্পের ফোন তাকাইচির কাছে এসেছিল, সে কথা মেনে নিয়েছে টোকিয়ো। তবে বৃহস্পতিবার জাপানের মন্ত্রিসভার সচিব মিনোরু কিহারা দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত তিন বছরে একাধিক বার তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে তাইওয়ানের জল এবং আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বেজিং। ২০২২ সালের অগস্টে চিনের আপত্তি খারিজ করে আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পরেই নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। সে সময় ধারাবাহিক ভাবে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে শুরু করে চিনা যুদ্ধবিমান। চিন-তাইওয়ান সঙ্কটের আবহে সে সময় আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালীতে ঢুকেছিল। পূর্ব চিন সাগর থেকে কয়েকটি জাপানি যুদ্ধজাহাজও তাইওয়ান প্রণালীতে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রথম বার তাইওয়ান প্রণালীতে জাপানি যুদ্ধজাহাজের ‘অনুপ্রবেশ’ ঘিরে দু’দেশের সংঘাতের শুরু হয়। সে সময় তাইওয়ান সংলগ্ন জাপানি দ্বীপের সেনকাকুর নাম হঠাৎ করেই বদলে দিয়াওয়ু করে দেয় চিন। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে টোকিয়ো বার বার অভিযোগ জানালেও, তাতে গুরুত্ব দেয়নি বেজিং। উল্টে অন্যায় ভাবে সংশ্লিষ্ট দ্বীপটি জাপান দখল করে রেখেছে বলে পাল্টা প্রচার চালায় জিনপিং সরকার।