Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Ayman al-Zawahiri

Ayman al-Zawahir: দু’দশক ধরে জওয়াহিরির নিশানায়, তবু আল কায়দা নেতার হত্যা নিয়ে নীরব নয়াদিল্লি

বিশ্বের প্রথম সারির অনেক দেশই যখন জ়াওয়াহিরির নিহত হবার বিষয় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে, তখন ভারত নীরব।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২২ ০৮:২৬
Share: Save:

আল কায়দার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জওয়াহিরির নিহত হবার খবরে নীরব ভারত। বিশ্বের প্রথম সারির অনেক দেশই যখন জ়াওয়াহিরির নিহত হবার বিষয় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে, তখন বারবার প্রশ্ন করেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সাউথ ব্লকের এই ‘নীরবতার’ পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এক, নয়াদিল্লি বুঝে নিতে চাইছে, জওয়াহিরি-অভিযানের পিছনে আমেরিকাকে সহযোগিতা করেছে কারা। যদি পাকিস্তান হয়, তাহলে আমেরিকার শত্রুকে শেষ করতে সাহায্যের বিনিময়ে চড়া দাম তুলবে ইসলামাবাদ। আর সেখানে ভারত-বিরোধিতাও মিশে থাকবে। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কৌশলগত অংশিদারিত্ব রয়েছে ঠিকই। তবে অভিজ্ঞতা বলছে, আমেরিকা নিজের স্বার্থে পাকিস্তানের হাত ধরতে তৈরি থেকেছে সর্বদা। দুই, তালিবানের নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে ভারত। কাবুলে দূতাবাস খোলা হয়েছে। তালিবানের সঙ্গে আলোচনার পর ভারতের নিরাপত্তা কর্তারা সাউথ ব্লককে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের মাটিকে ভারত-বিরোধী কোনও গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে কাবুল। কিন্তু আফগানিস্তানে জ়াওয়াহিরির উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, এতে পাক-তালিবানের মদত থাকতেই পারে। বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে সাউথ ব্লককে। তবে আজই তালিবান সরকারের মন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক ভাবে যোগসূত্র রয়েছে ভারতের। আফগানিস্তানে বেশ কিছু গবেষণা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুরু করেছিল ভারত। আমরা চাই অসমাপ্ত সেই কাজ সম্পূর্ণ হোক।’’

তৃতীয়ত, আল কায়দার এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযানে পাক তালিবান বা হক্কানি-বিরোধী তালিবান গোষ্ঠীর হাতও থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে এখন আফগানিস্তানের তালিবানের সঙ্গে হক্কানিদের সংঘাত ক্রমশই বাড়ছে।

আল কায়দার নেতার নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে নয়াদিল্লির তরফে প্রাথমিক কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি ঠিকই, তবে দীর্ঘ দু’দশক ধরে এই আয়মান আল জওয়াহিরির নিশানায় ছিল ভারত। ২০০১ সাল থেকে বিভিন্ন ভিডিয়োতে ভারতের নামোল্লেখ করতেন তিনি। আর ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন নিহত হবার পর থেকেই নয়াদিল্লিকে হুমকি দিয়ে বিবৃতি বেড়ে গিয়েছিল জাওয়াহিরির। সর্বশেষ হুমকি পয়গম্বরকে নিয়ে বিজেপির সাসপেন্ড হওয়া নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের পর। জাওয়াহিরি বলেছিলেন, গুজরাত, দিল্লি, মুম্বই ও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন শহরে আত্মঘাতী হামলা চালাবে আল কায়দা। তার আগে কর্নাটকে হিজাব নিয়ে টানাপড়েনের সময়েও খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন আল কায়দার শীর্ষ নেতা। হিজাব পরা কর্নাটকের কলেজ ছাত্রীর প্রতিবাদের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল তার মুখে।

ভারতের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে হমকি দিয়েই শুধু থেমে থাকেননি জাওয়াহিরি। ২০১৪ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়দার আঞ্চলিক বিকাশের পরিকল্পনা করেন তিনি। একটি ভিডিয়োতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলিমদের উদ্দেশে জিহাদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান জওয়াহিরি। কাশ্মীরকে প্যালেস্তাইনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

এমনকি, ভারতকে সমর্থন করার জন্য মুসলিম দেশ সৌধি আরবেরও সমালোচনা করেছেন। তবে ২০১৭ সালে কাশ্মীরে আল কায়দার শাখা সংগঠন আনসার ঘাজ়ওয়াত-উল হিন্দ গঠিত হলেও উপত্যকায় সেভাবে সন্ত্রাস ছড়াতে পারেনি। বিশেষ করে, জাকির মুসা নিহত হওয়ার পর সংগঠনটি শেষ হয়ে যায়। এবছরের গ্রীষ্মে অবশ্য ভারতে নতুন করে ক্যাডার নিয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জওয়াহিরি।

তবে সাউথ ব্লক সূত্র বলছে, জওয়াহিরি, হাফিজ় সঈদের মতো ভারতে বিরাট কোনও হামলায় যুক্ত ছিলেন না। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে আমেরিকার অভিযানের নাড়িনক্ষত্র না জানা পর্যন্ত আগ বাড়িয়ে নাক গলাতে চাইছে না সাউথ ব্লক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ayman al-Zawahiri Al Qaeda osama bin laden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE