যা অনুমান করা হয়েছিল, তা-ই ঘটেছে। কেন্দ্র স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার কমায়নি। এই দফায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও অপরিবর্তিত রেখেছে রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়)। বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ না কমায় আমজনতা খুশি। রেপো কমায় শেয়ার বাজারও তেমন অখুশি নয়। তার উপর চলতি অর্থবর্ষে মূল্যবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক, বাড়িয়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হার। এই দুই অনুমান বাজারের মনে ধরেছে। টানা আট দিন নামার পরে গত সপ্তাহের শেষ দু’দিন উঠেছে সূচক।
সামনে বিহারে নির্বাচন। এমন সময়ে সরকার সুদ কমানোর ঝুঁকি নিতে চায়নি। ব্যাঙ্কের তুলনায় স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদ কমবেশি ১%। ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় যখন সর্বাধিক ৬.৬%, তখন ৭.৭% পাওয়া যাচ্ছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে (এনএসসি) এবং ৭.৫% ডাকঘরের পাঁচ বছর মেয়াদি জমায়। প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমে সুদ ৮.২%। এনএসসি-র সুদ একই থাকায় ভারত সরকারের পরিবর্তনশীল হারের (ফ্লোটিং রেট) বন্ডেও সুদের হার ৮.০৫ শতাংশই রয়েছে।
ফেব্রুয়ারি থেকে জুনে তিন দফায় আরবিআই রেপো কমিয়েছে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট। এ বার আর না কমালেও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছে। এই অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার ৬.৫% থেকে বাড়িয়ে করেছে ৬.৮%। মূল্যবৃদ্ধি কমিয়ে ২.৬%। চারপাশের অনিশ্চয়তার মধ্যে যা উৎসাহজনক। বিভিন্ন পণ্যে জিএসটি হার কমাই এর কারণ। এতে চাহিদা বাড়বে, চাঙ্গা থাকবে শিল্প। দাম কম থাকলে কমতে পারে সুদও। ৩৭৫টি পণ্যে নতুন হারে জিএসটি বসেছে ২২ সেপ্টেম্বর। তার পরে কেনাকাটা বাড়ে। বিশেষত গাড়ি, বাইকের। সেপ্টেম্বরে জিএসটি সংগ্রহ ৯.১% বেড়ে পৌঁছেছে ১.৮৯ লক্ষ কোটি টাকায়। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কথায়, ‘‘বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি অস্থির হলেও ভারতীয় অর্থনীতি মজবুত।’’
বেশ কয়েক দিন পরে ফের মাথা তুলেছে শেয়ার বাজার। তবে সোনার তুলনায় সেনসেক্স অনেকটা পিছিয়ে। আগে ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম তার গায়ে গায়ে চলত। এখন অনিশ্চয়তার বাজারে তীর গতিতে বেড়ে ওই সূচককে ৪০,০০০ পিছনে ফেলেছে। সেনসেক্স দ্রুত বেড়ে এই ব্যবধান কমাতে পারে কি না কিংবা ধনতেরস বা বিয়ের মরসুমে সোনার দাম আরও চড়ে কি না, সেটাই দেখার। হালে বহু ফান্ড লগ্নিকারীদের ভাল রিটার্ন দিয়েছে। যেমন: গোল্ড ফান্ড, সিলভার ফান্ড এবং মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড।
আগ্রহীরা বাজারে আসা নতুন শেয়ারের দিকেও চোখ ফেরাতে পারেন। চলতি সপ্তাহে টাটা ক্যাপিটাল এবং এলজি ইলেকট্রনিক্স বাজারে প্রথমবার শেয়ার ছেড়ে (আইপিও) তহবিল সংগ্রহে নামছে। তারা আনছে যথাক্রমে ১৫,৫১২ কোটি এবং ১১,৬০৭ কোটি টাকার আইপিও।
এ সপ্তাহেই সংস্থাগুলি জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক ফল প্রকাশ করতে শুরু করবে। প্রথম দিকে হাজির হবেএই টিসিএস, টাটা এলেক্সি, টেক মাহিন্দ্রা, এইচসিএল টেক, এভিনিউ সুপারমার্টস, আনন্দ রাঠি, আইসিআইসিআই লোম্বার্ড এবং প্রুডেন্সিয়ালের মতো সংস্থা। দেড় মাস ধরে প্রকাশিত হতে থাকা এই ফল শেয়ারের দামেও প্রভাব ফেলবে। ফলে সজাগ থাকতে হবে লগ্নিকারীদের।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)