খাদ্যপণ্যের চড়া দামে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুললেও, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়াল না। এই নিয়ে টানা তিন বার রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) স্থির রইল ৬.৫ শতাংশে। তবু বৃহস্পতিবার ঋণনীতির পরে চুপসে গেল শেয়ার সূচক। বৃহস্পতি এবং শুক্র মিলিয়ে সেনসেক্স নামল ৬৭৪ পয়েন্ট, নিফ্টি ২০৪।
পতনের কারণ মূলত দু’টি। প্রথমত: আরবিআইয়ের ইঙ্গিত, খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে না এলে আবার সুদ বাড়তে পারে। আনাজ-সহ আগুন খাদ্যপণ্য জুনের মূল্যবৃদ্ধিকে ৪.৮১ শতাংশে তুলেছিল। জুলাইয়ে তা ৬% ছাড়ানোর আশঙ্কা। এই ৬ শতাংশই শীর্ষ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া মূল্যবৃদ্ধির সর্বোচ্চ সহনসীমা। ফলে সুদ কমার আশা এখন বহু দূর বলেই ধারণা। আজ বিকেলেই জানা যাবে জুলাইয়ে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। দ্বিতীয়ত, সাময়িক ভাবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নগদ জমার হার অর্থাৎ সিআরআর (যে হারে ব্যাঙ্কগুলিকে টাকা জমা রাখতে হয় তাদের কাছে) বাড়ানো। তা ছিল ৪.৫%। চাপানো হয়েছে ১০% বাড়তি সিআরআর। উদ্দেশ্য, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থেকে বাড়তি নগদ (১ লক্ষ কোটি টাকা) শুষে নেওয়া। কারণ বাজার থেকে ২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার-সহ নানা কারণে ব্যাঙ্কগুলির হাতে এখন প্রচুর নগদ। যা দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা। অনুমান, ১০% বাড়তি সিআরআর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা শুষে নেবে।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষে গড় মূল্যবৃদ্ধির অনুমান বাড়িয়ে করেছে ৫.৪%। আগামী বছর লোকসভা ভোট। তার আগে কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তাই মূল্যবৃদ্ধি এখন কেন্দ্রের বড় মাথাব্যথা। তড়িঘড়ি বাসমতী নয় এমন চাল রফতানি নিষিদ্ধ হয়েছে। টোম্যাটো আমদানি করা হচ্ছে নেপাল থেকে। গম-সহ কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে চড়ে থাকা পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমানো নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই।
জুনে শিল্পবৃদ্ধি তিন মাসের তলানি ছুঁয়ে ৩.৭%। এপ্রিল-জুনে কোল ইন্ডিয়ার লাভ ১০% কমে ৭৯৪১ কোটি টাকা। ৪০ শতাংশেরও বেশি কমে হিন্দালকোর মুনাফা ৪১১৯ কোটি থেকে নেমেছে ২৪৫৪ কোটিতে।
৩৪% কমে ওএনজিসির হয়েছে ১০,০১৫ কোটি। এই খবরগুলিতেও বাজার হতাশ। সূচক সম্প্রতি নজিরবিহীন উচ্চতায় ওঠার পরে বহু মানুষ ফান্ড থেকে টাকা তুলছেন। শেয়ার ভিত্তিক (একুইটি) ফান্ডে লগ্নি কমেছে। মার্চে ২০,৫৩৪ কোটির জায়গায় গত মাসে লগ্নি হয়েছে ৭৬২৫ কোটি। তবে এসআইপি-র পথে ফান্ডে লগ্নি বেড়ে ১৫,২৪৫ কোটি ছুঁয়েছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)