লাগামহীন গতিতে ছুটছে সোনা-রুপোর দাম। ফলে ধনতেরসে বাজার মার খাওয়ার শঙ্কায় ভুগছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশ। শনিবার, ১৮ অক্টোবর অবশ্য টাকার অঙ্কে বিক্রির বহর দেখে মুখের হাসি চওড়া হয়েছে তাঁদের। যদিও প্রদীপের নীচের অন্ধকার থেকেই যাচ্ছে। কারণ, কেনাকাটার বড় অংশ জুড়ে ছিল স্বর্ণমুদ্রা এবং কম ওজনের সোনার ছোট বার। তবে কি দামের জন্য ‘হলুদ ধাতু’র অলঙ্কারের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে আমজনতা? উঠছে সেই প্রশ্ন।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর দাম বেশি থাকার জন্য ধনতেরসের প্রথম দিনে টাকার অঙ্কে বিপুল সোনা বিক্রি হয়েছে, মনে হতে পারে। কিন্তু, ওজনের দিকে তাকালে হিসাব পরিষ্কার হয়ে যাবে। সেখানে ‘হলুদ ধাতু’র বিক্রির সূচক নিম্নমুখী। শুধু তা-ই নয়, উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমেছে অলঙ্কারের চাহিদা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে তারা।
আরও পড়ুন:
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন ‘অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিল’-এর চেয়ারম্যান রাজেশ রোকদে। তাঁর কথায়, ‘‘ধনতেরসে সামগ্রিক ভাবে সোনার বিক্রি গত বছরের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। তার একমাত্র কারণ হল আগুন দাম।’’
অন্য দিকে ‘ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সচিব সুরেন্দ্র মেহতা জানিয়েছেন, ‘‘ধনতেরসে অলঙ্কার কেনার একটা হুজুগ থাকে। এ বছরে ক্রেতাদের সেই ভিড় ছোট-বড় কোনও গয়নার দোকানেই সে ভাবে দেখতে পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত অলঙ্কারের চাহিদা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম রয়েছে। কেবল বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণমুদ্রা এবং সোনার বার।’’
স্বর্ণালঙ্কারের দামের ১০-১২ শতাংশ হল তা তৈরির খরচ। কিন্তু স্বর্ণমুদ্রার ক্ষেত্রে সেটা খুবই কম। এ ছাড়া ‘হলুদ ধাতু’র বার কিনলে লাগে না কোনও মেকিং চার্জ। ফলে ধনতেরসে তুলনায় কম খরচ করে সোনা ঘরে আনার সুযোগ পেয়েছে আমজনতা। আর তাই গয়নার দিকে সে ভাবে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে না তাঁদের, বলছেন বিশ্লেষকেরা।
আরও পড়ুন:
উৎসবের মরসুমে অলঙ্কারের বিক্রি বাড়াতে বেশ কিছু আর্থিক প্রকল্প চালু করে টাটা গোষ্ঠীর তানিষ্ক এবং রিলায়্যান্স রিটেলস। কিন্তু, তাতেও ধনতেরসে খুব একটা লাভ হয়েছে, এমনটা নয়। রিলায়্যান্স রিটেলসের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, তাদের চালু করা প্রকল্পে গয়নার জন্য লগ্নির পরিমাণ পাঁচ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সেখানে তানিষ্কে এই সূচক নেমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ।
এই পরিস্থিতির কথা আঁচ করে চলতি বছরের অগস্টে মাত্র ন’ক্যারেটের গয়না বাজারে আনে টাটা গোষ্ঠী। বর্তমানে অনলাইনে হালকা ওজনের ওই ‘হলুদ ধাতু’র অলঙ্কার বিক্রি করছে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থা। এতে আবার হলমার্ক বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্র। শনিবার, ধনতেরসের প্রথম দিনে ন’ক্যারেটের সোনা কত পরিমাণে বিক্রি হয়েছে, সেই তথ্য অবশ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর সামান্য কমে ১০ গ্রাম ‘হলুদ ধাতু’র দাম নেমে আসে ১ লক্ষ ২৭ হাজার টাকায়। এর আগে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ২৯৪ টাকায় চড়েছিল এর দর, যা সর্বোচ্চ। গত বছরের ধনতেরসের থেকে এ বার সোনার দাম ৬০ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এর জন্য ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার সূচক নিফটি-৫০তে একটি নতুন ট্যাব খোলা হয়েছে। তাতে পাঁচ শতাংশের বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছে।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে ধনতেরসের সময়ে সোনা কেনা শুভ হিসাবে বিবেচিত। ফলে রবিবার, ১৯ অক্টোবর ফের দোকানে ভিড় উপচে পড়বে বলে আশাবাদী গয়না ব্যবসায়ীরা। তবে তাঁদের কত শতাংশ অলঙ্কার কেনার দিকে ঝুঁকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।