Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

স্বাধীনতা বাঁচাতে বৈঠকে ‘না’

সুদের হার ঠিক করতে বৈঠকে বসার আগে এক প্রস্ত আলোচনার জন্য ঋণনীতি কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০২:৩৪
Share: Save:

সুদের হার ঠিক করতে বৈঠকে বসার আগে এক প্রস্ত আলোচনার জন্য ঋণনীতি কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরবিআইয়ের স্বাধীনতা বজায় রাখার স্বার্থে ‘না’ করে দিলেন আলোচনার টেবিলে বসার প্রস্তাবে।

বুধবার সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল জানান, ‘‘বৈঠক হয়নি। আলোচনায় বসার জন্য অর্থ মন্ত্রকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন ঋণনীতি কমিটির সমস্ত সদস্য।’’

ঋণনীতি নির্ধারণের আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার রেওয়াজ অনেক পুরনো। রঘুরাম রাজনের জমানা পর্যন্ত, যখন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার একাই সুদ ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিতেন, তখনও তা ছিল। এমনকী পটেলও দায়িত্ব নেওয়ার পরে তা করেছেন। কিন্তু ঋণনীতি ঠিক করার আগে ওই কমিটির সমস্ত সদস্যকে বৈঠকে ডাকার কথা আগে শোনা যায়নি।

ঋণনীতি কমিটিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সদস্য তিন জন। পটেল ছাড়া বাকি দু’জন হলেন, ডেপুটি গভর্নর (ঋণনীতি) বিরল আচার্য এবং এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর মাইকেল পাত্র। বাকি তিন সদস্য বাইরের। অর্থ মন্ত্রকের প্রস্তাব ছিল, বাইরের সদস্যরা ১ জুন তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলুন। আর পরের দিন, অর্থাৎ ২ জুন কথা হোক পটেল-সহ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৩ প্রতিনিধির সঙ্গে। মন্ত্রকের তরফে আলোচনায় বসার কথা ছিল আর্থিক বিষয়ক সচিব, মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন ও প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যান্যালের।

স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে দানা বাঁধছিল বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছিল, এর মাধ্যমে কি ঋণনীতি নির্ধারণে প্রভাব খাটাতে চাইছে কেন্দ্র? হস্তক্ষেপ করছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায়? এই পরিস্থিতিতেই এ দিন বৈঠকে না- যাওয়া নিয়ে পটেলের ওই বিবৃতি।

অনেকে বলছেন, রাজন বিদায়ের পরে নোট বাতিল প্রসঙ্গে পটেল যে ভাবে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন, তাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিভিন্ন জন বলছিলেন, কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার সেই বুকের পাটা পটেলের নেই। সে দিক থেকে এ দিন তাঁর ঘোষণা বেশ চমকে দেওয়ার মতো।

এমনিতে অবশ্য সুদ নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিবৃতির লড়াই এমনকী তেতো সম্পর্ক নতুন নয়। অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে পি চিদম্বরম থাকুন বা অরুণ জেটলি। উল্টো দিকে শীর্ষ ব্যাঙ্কে গভর্নরের চেয়ারে রাজন থাকুন বা পটেল। সুদ নিয়ে চাপান-উতোর চলেই। অর্থ মন্ত্রক চায়, বৃদ্ধিতে গতি আনতে সুযোগ থাকলেই সুদ কমাক শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এ নিয়ে ঋণনীতির আগে অনেক সময়ে প্রকাশ্যে সওয়ালও করেন অর্থমন্ত্রী।

উল্টো দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পাখির চোখ করে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখাকে। ফলে মূল্যস্ফীতি মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা দেখলে, সুদ ছাঁটাইয়ে রাজি হয় না তারা। এখন যেখানে মূল্যবৃদ্ধি ৪ শতাংশের আশেপাশে বেঁধে রাখতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক দায়বদ্ধ, সেখানে বিতর্ক এড়াতে এমন কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কমিটির সদস্যদের তেমন উপায় ছিল না বলেই বিশেষজ্ঞদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE