নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।
শেয়ার বাজারে ধস নামলেও, অর্থনীতি নিয়ে আশ্বাস বাণীতেই আটকে থাকল মোদী সরকার। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, করোনা-আতঙ্কের প্রভাব রুখতে হাতেকলমে পদক্ষেপের দেখা মিলল না এখনও।
নাগাড়ে পড়তে থাকা ভারতের বাজার আজ সকালের দিকে বিপুল নামার পরে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায় লেনদেন। পরে সেনসেক্স, নিফ্টি বিপুল উঠলেও, সেটা সূচকের ঘুরে দাঁড়ানো নয় বলেই মনে করছেন বহু বিশেষজ্ঞ। তবে অর্থ মন্ত্রকের দাবি, অর্থনীতির ভিত মজবুত। দুনিয়া জুড়ে শেয়ার বাজারে ধস নামায় এ দেশেও লগ্নিকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তা দেশীয় অর্থনীতির প্রতিফলন নয়।
অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব ঠেকাতে ১৮ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছিল শিল্প। নির্মলাও বলেছিলেন, শীঘ্রই বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু ২৫ দিন কেটে গিয়েছে, তার দেখা মেলেনি। আজ দেশের অর্থনীতির ভিত পোক্ত বলে দাবি করলেও, মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন স্বীকার করেছেন, করোনা-আতঙ্কে ব্যবসা, পর্যটন, হোটেল-রেস্তরাঁর মতো ক্ষেত্রে ধাক্কা লাগবে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, কমতে পারে আর্থিক বৃদ্ধির হারও। তা হলে ঝিমিয়ে থাকা অর্থনীতিতে করোনা-প্রভাব আটকাতে কবে মাঠে নামবে সরকার? উত্তরে অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘‘কথাবার্তা বলছি। শুধু কথা নয়, কাজও চলছে।’’
নিজেরা পদক্ষেপ করে উঠতে না-পারলেও, অর্থ মন্ত্রক চাইছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করুক বা বাজারে নগদের জোগান বাড়াক। যুক্তি, সব দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কই তা করছে। সুদ কমানো নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না জানতে চাওয়ায় আজ নির্মলা জানান, গভর্নর বলেছেন পরিস্থিতির দাবি খোলা মনে ভাববেন।
আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কও বলেছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। শেয়ার বা মুদ্রার বাজারে নগদের জোগান বজায় রাখতে সব রকম পদক্ষেপ করা হবে। দেশের বাজারে অতিরিক্ত ২৫ হাজার কোটি টাকা জোগানোর বার্তাও দিয়েছে তারা। তবে সুদ কমানোর পথে বাধা, ৪% লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে যাওয়া সেই খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারই (ফেব্রুয়ারিতে ৬.৫৮%)। করোনার ধাক্কায় ব্যবসা মার খেলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে গিয়ে ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সুব্রহ্মণ্যনের অবশ্য দাবি, ‘‘আনাজের দাম কমলে মার্চ থেকেই মূল্যবৃদ্ধির হার
কমবে বলেছিলাম। জুলাইয়ের মধ্যে তা নাগালের মধ্যে আসবে। ফলে আরবিআইয়ের সামনে সুযোগ আছে।’’
অর্থনীতির ঝিমুনির প্রধান কারণ বাজারে কেনাকাটা কমা। বিশেষত গ্রামে। আজ সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, এক থেকে দেড় বছর পরে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে মূল্যবৃদ্ধি শহরের চেয়ে বেশি। যার অর্থ, গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। কেনার ঝোঁক বাড়ছে।’’ অর্থনীতিরা অবশ্য বলছেন, এটা খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার বেশি হওয়ার জন্য হতে পারে। কিন্তু কৃষ্ণমূর্তির যুক্তি, জানুয়ারিতে শিল্পোৎপাদন ২% বেড়েছে। মূলধনী পণ্য উৎপাদনও ১০% বেড়েছে। লগ্নির ক্ষেত্রে যা ইতিবাচক চিহ্ন। টানা তিন মাস বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনও বেড়েছে। অর্থাৎ চাহিদা বাড়ছে। বিদেশি মুদ্রার তহবিল যে কোনও ধাক্কা সামলানোর পক্ষে যথেষ্ট বলে দাবি তাঁর। বলেছেন, অশোধিত তেলের দাম কমায় আমদানির খরচ কমা ও বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে ঘাটতি কমার কথাও।
তা হলে শেয়ার বাজারে ধস নামছে কেন? সুব্রহ্মণ্যনের উত্তর, বিশ্ব বাজারের তুলনায় সেই পতন ভারতে অনেক কম। তবে বাজারের ধসে বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ার বা বেশি কারণ খুঁজতে যাওয়ার দরকার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy