হঠাৎ টাকার প্রয়োজন হলে অনেকেই ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে ফেলেন ব্যক্তিগত ঋণ (পার্সোনাল লোন)। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুদ সমেত সেই অর্থ ফেরত না দিলে তৈরি হয় জটিলতা। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গ্রাহকের বাড়ি বা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে ঋণ আদায়কারী এজেন্টদের হয়রানি করার অভিযোগ ভুরি ভুরি। কিন্তু, আদৌ তা করার অধিকার রয়েছে তাঁদের?কী বলছে আইন?
এ ব্যাপারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআইয়ের একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী, ঋণের টাকা আদায় করার জন্য এজেন্টদের গ্রাহকের বাড়িতে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু, কখনওই ঋণ গ্রহণকারীর কর্মক্ষেত্রে যেতে পারেন না তাঁরা।
ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহকের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা করা ব্যাঙ্কের কর্তব্য। ঋণ আদায়কারী এজেন্ট তাঁর কর্মক্ষেত্রে গেলে সেই অধিকারভঙ্গ হবে, বলছে আরবিআইয়ের নির্দেশিকা। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুযায়ী, গ্রাহকের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ঋণের বর্তমান অবস্থা এবং সুদ সংক্রান্ত বিষয়ে খোলাখুলি ভাবে জানাবেন সংশ্লিষ্ট এজেন্ট।
কিন্তু, কোনও ভাবেই গ্রাহকের উপর মৌখিক বা শারীরিক নির্যাতন, মানসিক চাপ বা তাঁকে প্রাণহানির হুমকি দেওয়া যাবে না। এজেন্টরা তাঁর সঙ্গে কোনও রকমের জবরদস্তিও করতে পারবেন না। শুধু তা-ই নয়, সেই ধরনের আচরণ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে পাল্টা থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারেন সংশ্লিষ্ট গ্রাহক।
২০১৭ সালে গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে এস পুত্তাস্বামীর করার মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে বলা হয়, সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রাহকের স্বাধীনতার দিকে ব্যাঙ্ককে লক্ষ রাখতে হবে। ফলে ঋণ আদায়কারী এজেন্ট কখনওই তাঁর থেকে ব্যক্তিগত ফোন নম্বর, ই-মেল আইডি বা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম চেয়ে নিতে পারবেন না। মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা প্রকাশ করাও নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন:
আরবিআই নির্দেশিকা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে সব সময়ে গ্রাহকের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতে হবে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বা পারস্পরিক সম্মতি মেনে এর আগে বা পরে গ্রাহকের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তিনি। এর জন্য প্রথমে তাঁকে সুনির্দিষ্ট নোটিস পাঠাতে হবে। যদি ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রাহকের সম্পত্তি নিলাম করার প্রয়োজন হয়, তা হলে তাঁকে সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।