খাতায়-কলমে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা নামালেও সংসার চালানোর চড়া খরচে বহু মানুষের দুর্ভোগ চরমে। ঘাড়ে যাঁদের ঋণের বোঝা চেপে, তাঁদের একাংশ আরও বেশি বিপাকে। এই অবস্থায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক দু’দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে এ বছর। তাতে কিছুটা স্বস্তিও পেয়েছেন তাঁরা। আগামী দিনে আরও বেশি স্বস্তির ইঙ্গিত দিয়ে সোমবার স্টেট ব্যাঙ্কের সমীক্ষা জানাল, চলতি অর্থবর্ষেই আরবিআই ১২৫-১৫০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট (ব্যাঙ্কগুলিকে যে সুদে ধার দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) কমাতে পারে। সেটা হলে বাড়ি-গাড়ি সমেত বিভিন্ন ঋণে সুদ নামবে তাল মিলিয়ে। ধার শোধের মাসিক কিস্তির (ইএমআই) খরচ কমবে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সব থেকে ভাল ফল মিলবে রেপো যদি একলপ্তে ৫০ বেসিস পয়েন্ট ছাঁটা হয়।
মূলত মূল্যবৃদ্ধির হারের মাথা নামানো ভিত্তিতেই এই মত প্রকাশ করেছে স্টেট ব্যাঙ্কের সমীক্ষা। খাদ্যপণ্যের দাম কমায় মার্চে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ৬-৭ মাসের মধ্যে সব থেকে নীচে এসে ঠেকেছে ৩.৩৪ শতাংশে। পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে তা থাকবে ৪%। প্রথম ত্রৈমাসিকে হবে ৩%।
দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসও সুদের হার কমানোর রাস্তা চওড়া করেছে। মূল্যবৃদ্ধিকে বাদ না দিয়ে হিসাব করা আর্থিক বৃদ্ধির (নমিনাল জিডিপি) হার ২০২৫-২৬ সালে ৯ থেকে ৯.৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে অনুমান। বাজেটে অবশ্য তা ১০% হবে বলে বলা হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি এবং আর্থিক বৃদ্ধি দু’টির হারই কম থাকা সুদের হার কমানোর সুবর্ণ সুযোগ বলে ‘মূল্যবৃদ্ধি ও সুদে হারের গতিপথ’ সংক্রান্ত স্টেট ব্যাঙ্কের বিশেষ আর্থিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সমীক্ষায় অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, “ক’বছরের মধ্যে সব থেকে কম মূল্যবৃদ্ধি এবং আগামী দিনে তা আরও কমার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আশা করছি, চলতি অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট এবং দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ইতিমধ্যেই গত দুই দফায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে মোট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। ফলে আগামী মার্চের মধ্যে রেপো কমে ৫-৫.২৫ পয়েন্টে নামতে পারে।’’ তবে একলপ্তে ৫০ বেসিস পয়েন্ট রেপো ছাঁটাই বাস্তবে বেশি সহায়ক হবে বলে মত তাঁদের।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধি যে পথে চলছে তাতে তা ২- ৬ শতাংশের মধ্যেই থাকবে। আগামী দিনে তার হার ক্রমগাত কমলে চলতি অর্থবর্ষের মধ্যে রেপো রেট ১২৫-১৫০ বেসিস পয়েন্ট কমার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেখানে দাবি, ইতিমধ্যেই যে ৫০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানো হয়েছে, তার সুবাদে রেপো রেটের সঙ্গে যুক্ত ঋণে একই হারে সুদ কমিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। তবে মূলধন সংগ্রহের খরচের ভিত্তিতে ঋণে সুদ ঠিক করার প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লগবে। আমানতেও সুদ কমাতে হবে তাদের। অর্থনীতিবিদদের অবশ্য মত, এতে আমানত সংগ্রহ বৃদ্ধি কঠিন হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)