সুদ কমার রাস্তা চওড়া হল। সেপ্টেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমে এসেছিল ১.৫৪ শতাংশে। তখনই শুরু হয়েছিল ফের সুদ কমার জল্পনা। এ বার তা আরও উস্কে দিল অক্টোবরে মূল্যবৃদ্ধির হার। জিএসটি কমায় যা নেমেছে ০.২৫ শতাংশে। পাইকারি বাজারে ঘটেছে মূল্য-হ্রাস (১.২১%)। এর পরেও কি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানো থেকে বিরত থাকবে? তাদের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক ৩-৫ ডিসেম্বর। শিল্প এবং শেয়ার বাজারের নজর সে দিকেই।
এর আগে রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) কমেছে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট। সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, এই অর্থবর্ষে কমানো হতে পারে আরও ২৫-৫০ বেসিস পয়েন্ট। অর্থাৎ তা নামতে পারে ৫ শতাংশে। তখন বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ঋণে সুদ আরও কমবে। এতে এক দিকে শিল্প উপকৃত হবে, অন্য দিকে ধার শোধের মাসিক কিস্তি (ইএমআই) খাতে খরচ কমবে সাধারণ ঋণগ্রহীতার। তবে এর জেরে সুদ আরও কমতে পারে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য জমাতেও। যে কারণে আশঙ্কা দানা বাঁধছে সুদ নির্ভর মানুষের মনে।
ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক জমায় কিছুটা সুদ কমেছে। তবে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদে হাত পড়েনি। সম্ভবত বিহারে ভোটের জন্য কেন্দ্র পিপিএফ, এনএসসি, এমআইপি, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, সুকন্যা সমৃদ্ধি ইত্যাদিতে সুদ কমাতে চায়নি। এ বার ওই নির্বাচন তাদের প্রত্যাশার থেকে ভাল ফল দিয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে এনডিএ জোট। অন্যান্য কিছু রাজ্যে ভোটের মাস পাঁচেক দেরি আছে। ফলে এখন স্বল্প সঞ্চয়ে (এগুলি মূলত ডাকঘরের প্রকল্প, এখন কয়েকটি হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও) সুদ না কমানোর কারণ নেই। বরং কমানোর পক্ষে যুক্তি হল— ব্যাঙ্কে যদি সুদ কমে এবং ডাকঘরে না কমে, তা হলে ব্যাঙ্ক ছেড়ে ডাকঘর প্রকল্পে ঝুঁকবেন অনেকে। এতে ব্যাঙ্কের আমানতে টান পড়তে পারে। চড়া সুদ বাবদ সরকারকেও বাড়তি খরচ বইতে হবে। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমতে পারে। তার আগে এখানে টাকা রাখার কাজ সেরে ফেলা জরুরি।
সুদ কমলে শিল্পের লাভ। শিল্প এগোলে চাঙ্গা হয় শেয়ার বাজার। নেমে আসা সুদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বন্ড ইল্ডও (প্রকৃত আয়) কমে। বাজারে বন্ডের দাম বাড়লে তবেই ইল্ড কমে। উপকৃত হন বন্ড এবং বন্ড ফান্ডে লগ্নিকারীরা। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড এখন ব্যাঙ্ক সুদের মতো, ৬.৫ শতাংশের আশেপাশে। ব্যাঙ্কের জমায় সুদের হার কমলে তা কমার সম্ভাবনা থাকবে।
সংস্থাগুলির জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক ফলে বাজার খুশি। আনন্দিত বিহারের নির্বাচনী ফলেও। মাঝে মধ্যেই সেনসেক্স, নিফ্টি সর্বকালীন উচ্চতার কাছে পৌঁছচ্ছে। একটি-দু’টি ভাল খবরে তা টপকে যেতে পারে যে কোনও দিন। শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডগুলির ন্যাভ চড়ে। অক্টোবরে এসআইপি পথে ফান্ডে লগ্নি (২৯,৫২৯ কোটি টাকা) নজির গড়েছে। এই তাহবিলের বড় অংশ বাজারে ঢুকছে। তাই বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি শেয়ার বেচলেও, সূচক উঁচুতে। তবে তা বাঁধন ভেঙে ছুটতে পারে শুল্ক নিয়ে ভারত-আমেরিকার সমঝোতা বা তাদের বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হলে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)