Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata News

বৃদ্ধা শাশুড়িকে মারধরে ধৃত বৌমার জামিন

বৃদ্ধা শাশুড়িকে চুলের মুঠি ধরে মারধর, চড়-কিল মারার অপরাধে গ্রেফতার হওয়ার পরের দিনই জামিন পেলেন বাঁশদ্রোণী থানার বো়ড়াল পঞ্চাননতলার বাসিন্দা স্বপ্না পাল।

শাশুড়ি যশোদা পালকে এবং বৌমা স্বপ্না পালকে। নিজস্ব চিত্র

শাশুড়ি যশোদা পালকে এবং বৌমা স্বপ্না পালকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০২:০১
Share: Save:

বৃদ্ধা শাশুড়িকে চুলের মুঠি ধরে মারধর, চড়-কিল মারার অপরাধে গ্রেফতার হওয়ার পরের দিনই জামিন পেলেন বাঁশদ্রোণী থানার বো়ড়াল পঞ্চাননতলার বাসিন্দা স্বপ্না পাল।

বুধবার সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, এক রোগা জীর্ণ চেহারার বৃদ্ধাকে এক মহিলা চুলের মুঠি ধরে মারধর করছেন। মহিলার হাতে ধরা একটি প্লাস্টিক। ভিডিও ফুটেজটি একাধিক হাত ঘুরে পৌঁছয় পুলিশের হাতে। আর তার পরেই গ্রেফতার হন ওই বৃদ্ধা যশোদা পালের বড় বৌমা স্বপ্নাদেবী।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যশোদাদেবী পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জনের গাছ থেকে ফুল তুলে এনেছিলেন। আর সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে বড় বৌমা ওই ভাবে মারধর করছিলেন। কিন্তু শুধু কি ওই দিনই মারধর করেছিলেন?

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, বছর পাঁচেক আগে যশোদাদেবীর স্বামী মারা যান। তিন মেয়ে দুই ছেলের মা যশোদাদেবী এর পর থেকেই গোপাল আর রঞ্জিতের ‘ভাগের মা’ হয়ে যান। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই ছেলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে বাড়ি। কিন্তু মায়ের কোনও আলাদা ঘর নেই। কখনও ছোট ছেলের ঘরে তো কখনও বড় ছেলের ঘরে শোয়া বসা তাঁর। জায়গা না মিললে ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকেন চুপচাপ, না হলে বাইরে বেরিয়ে পড়েন। যদিও আইনত বাড়ির মালিক যশোদাদেবীই।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অ্যামনেশিয়া আক্রান্ত হওয়ায় সব কিছু মনে রাখতে পারেন না তিনি। মনে থাকে না ছেলেদের নামও। এমনকি কখন কী খেয়েছেন তা-ও ভুলে যান। মাঝে মাঝেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। পুজোর জন্য পড়শিদের বাড়ির গাছ থেকে ফুল তুলে আনেন। অভিযোগ এর জন্য প্রতিবেশীদের একাংশ বাড়ি এসে কথা শুনিয়ে যেত ছেলে-বৌমাদের। অভিযোগ, এর জন্যই বড় বৌমা শাশুড়িকে মারধর করতেন। শুধু ফুল তোলার জন্য নয়। নানা কারণে মাঝে মাঝেই শাশুড়িকে বকাঝকা থেকে শুরু করে হাত ধরে টানাহেঁচড়া চলত বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে বোড়ালের পঞ্চাননতলায় গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধা। বাড়িতে তিনি ছাড়া ছিলেন ছোট বৌমা শান্তি পাল আর তাঁর ছেলে। ভাবলেশহীন মুখে কিছু পরে ছোট বৌমার ঘরে এসে বসলেন। কিন্তু তাঁকে যে বড় বৌমা মারধর করেছেন, তা মনে করতে পারলেন বলে মনে হল না। শুধু তাই নয়। তাঁর ক’জন ছেলে জানতে চাইলে বললেন, ‘‘একটা! একটা-দুটো হবে।’’ মেয়ে ?— ‘‘একটা!’’

শুধু তাই নয়। স্বামী কোথায় জানতে চাইলে বললেন, ‘‘কাজে গিয়েছে। আসবে একটু পরে!’’ পাশেই বসেছিলেন ছোট বৌমা শান্তিদেবী। শুনে তিনি হেসে বললেন, ‘‘মা কিছু মনে রাখতে পারেন না। দুপুরে কী খেয়েছে তা-ও ভুল বলবে।’’ তিনি আরও জানান, মাস খানেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্য দিকে চলে গিয়েছিলেন। নিজের নামটুকু ছা়ড়া কিছুই বলতে পারেননি। পরে এক পড়শিই দেখতে পেয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যান। তা হলে এমন একজনকে কেন মারলেন স্বপ্নাদেবী? পাশের ঘরে থেকে তিনি বুঝতে পারেননি? শান্তিদেবীর উত্তর, ‘‘নাহ। আমি কোনওদিন দেখিনি। বুধবার পুলিশ আসার পরে জানতে পারলাম!’’

স্বপ্নাদেবীকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও কথা বলতে চাননি। তবে তাঁর ছেলে স্বপ্নজিৎ বলেন, ‘‘ঠাকুরমার দেখাশোনা আমার মা-ই করত। কিন্তু ঠাকুরমার জন্য প্রতিবেশীদের কাছে কথাও শুনতে হত মাকেই। মারধর করাটা সমর্থন করি না। কিন্তু কেন মারধর করল বুঝতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE