প্রতীকী ছবি।
তখন রাত প্রায় সওয়া বারোটা। রাত ফুরোলেই রবিবার সকালে ভোট। ফলে শনিবার অত রাতে ডিউটি অফিসার আর কয়েক জন পুলিশকর্মী ছাড়া থানায় কেউ নেই। এমনই সময়ে আচমকা বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি থানায় ঢুকেই সটান ডিউটি অফিসারদের সামনে এসে বললেন, ‘‘মাকে খুন করেছি। গ্রেফতার করুন!’’
তদন্তকারীরা জানান, প্রথমে ওই ব্যক্তিকে সুস্থ বলে মনে না হলেও কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা কিন্তু বিষয়টি উড়িয়ে দেননি। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নাম, ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি জানান তাঁর নাম চন্দন সরকার। মায়ের নাম অপু সরকার(৬০)। বাড়ি ৫০/৪ করুণাময়ী ঘাট রোডে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরে চন্দনবাবুর কথা মতো করুণাময়ী ঘাট রোডের ওই ঠিকানায় পৌঁছে ঘরে ঢুকে পুলিশ অফিসারেরা দেখেন খাটের উপরে পড়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধা। তাঁর শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গলায় ছুরির ক্ষত। সারা শরীরেও এলোপাথাড়ি ছুরির আঘাত। দেরি না করে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে পুলিশ এম আর বাঙুরে নিয়ে যায়। কিন্তু তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এর পরেই পুলিশ চন্দনবাবুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে তাঁর বাবা বুদ্ধদেব সরকার অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে করুণাময়ী ঘাট রোডের ওই বাড়িতে তিনি আর তাঁর মা থাকতেন। বাড়ির সঙ্গেই একটা দোকানঘর রয়েছে। সেটি চন্দনবাবুর বাবার ছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই দোকান চন্দনবাবু ও অপুদেবী একসঙ্গে চালাতেন। পাশপাশি চন্দনবাবু ফোটোগ্রাফিও করতেন। মাস খানেক আগে সল্টলেকের একটি সংস্থায় ফোটোগ্রাফার হিসাবে কাজও পান চন্দনবাবু। কিন্তু তাঁর কাজ পছন্দ না হওয়ায় কোনও বেতন না দিয়েই তাঁকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের দাবি, চাকরি যাওয়া নিয়ে মা তাঁকে বকাবকি করেন বলে চন্দনবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ জানায়, মানসিক অসুস্থতার জন্য চন্দনবাবুকে এক সময়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকতে হয়েছিল। তাঁর সল্টলেকের কাজ চলে যাওয়ার পরে অপুদেবী তা নিয়েও ছেলেকে কথা শোনান। পুলিশ জানায়, এ সব নিয়ে চন্দনবাবুর সঙ্গে তাঁর মায়ের শনিবার রাতেও গোলমাল হয়। এর পরে অপুদেবী রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পরে চন্দনবাবু রাগে ছুরি নিয়ে ঘুমন্ত মাকে আঘাত করেন বলে অভিযোগ।
রাগের মাথায় একের পর এক আঘাত করার পরে যখন দেখেন মা আর সাড়া দিচ্ছেন না তখন নিজেই বাড়ির দরজা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে সোজা থানায় পৌঁছে যান এবং আত্মসমর্পণ করেন। আপাতত তিনি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন বলেই পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy