Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ভর্তি থেকে সরলেন আরও কিছু শিক্ষক

জল্পনা উস্কে রাজভবনে দরবার শিক্ষামন্ত্রীর

কলা বিভাগের ছ’টি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে শুক্রবার রাত থেকে অনশন চালাচ্ছেন ২০ জন প়ড়ুয়া।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৫:৪৫
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলতে থাকায় আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথের কাছে দরবার করতে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস রাজভবনে গিয়েছিলেন শুক্রবার। পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। প্রবেশিকার দাবিতে পড়ুয়াদের অনশনের মধ্যেই রবিবার দুপুরে রাজভবনে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। যাদবপুর কাণ্ডের মধ্যে রাজভবনে তাঁর দরবার ঘিরে জল্পনা চলছে।

ইতিমধ্যে অন্য কয়েকটি বিভাগের মতো যাদবপুরের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাও ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশও। কলা বিভাগের ছ’টি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে শুক্রবার রাত থেকে অনশন চালাচ্ছেন ২০ জন প়ড়ুয়া। তাঁরা জানিয়েছিলেন, রবিবার বেলা ১২টার মধ্যে এই বিষয়ে কর্মসমিতির বৈঠক না-ডাকলে আমরণ অনশন করবেন। এ দিন কর্মসমিতির বৈঠক হয়নি। অনশনে অটল আছেন পড়ুয়ারা।

রবিবার দিল্লি থেকে ফেরার পরে কলকাতা বিমানবন্দরে যাদবপুরের প্রবেশিকা-বিতর্ক নিয়ে ইতিহাসবিদ ও যাদবপুরের সাংসদ সুগত বসু বলেন, ‘‘এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেই। আমি সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে বিশ্বাস করি।’’ অনশন, আন্দোলনের জেরে উৎকর্ষ ধাক্কা খাচ্ছে কি না, জানতে চাওয়া হলে সুগতবাবু বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, যাঁরা যাদবপুরের অধ্যাপক, অধ্যাপিকা এবং ছাত্রছাত্রী, তাঁদের কথাই সেখানে গুরুত্বপূর্ণ।’’

প্রতিবাদ: প্রবেশিকা পরীক্ষার দাবিতে পড়ুয়াদের অনশন চলছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের তরফে এ দিন উপাচার্যকে ই-মেল করে জানানো হয়: কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক এবং এটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান পরিস্থিতি অবিশ্বাসের ও বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে। ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপাচার্যকে জানিয়ে দিয়েছেন, ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাঁরা আইনসঙ্গত ভাবে যুক্ত থাকতে পারেন কি না, কর্তৃপক্ষ সেটা লিখিত ভাবে জানানোর আগে পর্যন্ত ওই প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকবেন তাঁরা। ইংরেজি, বাংলা ও তুলনামূলক সাহিত্যের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা আগেই এই পথ নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার রক্ষায় তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য এ দিন অনশনরত এক পড়ুয়া যাদবপুর ক্যাম্পাসের গায়ক, শিল্পীদের আহ্বান জানান। অনশনকারীদের তরফে দেবরাজ দেবনাথ জানান, রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এ দিন সকালে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে সোমবার পর্যন্ত সময় চান। রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘আচার্যকে সব কিছু লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে কর্মসমিতির বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

দেবরাজ বলেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, ভর্তি হতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের সময় কমছে। এই অবস্থায় প্রবেশিকা ফেরানোর সিদ্ধান্তের আগে পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবেই। আন্দোলন জোরদার করা হবে। এ দিন জেএনইউ (জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়) এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়ুয়া-প্রতিনিধিরা এসে আন্দোলন সমর্থন করেছেন।’’ দেবরাজ জানান, এ দিন সন্দীপ নস্কর নামে এক অনশনরত পড়ুয়ার পরীক্ষা (নেট) ছিল। তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে গড়িয়ার একটি কলেজে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, অনশনরত পড়ুয়াদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে জুটা চিন্তিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের জন্য পড়ুয়াদের দাবি সমর্থন করেন তাঁরা। রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছিল জুটা। কিন্তু রাজভবন থেকে কোনও উত্তর আসেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পদক্ষেপ করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও আচার্যের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

বাংলা, ইতিহাস, ইংরেজি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও তুলনামূলক সাহিত্যে প্রবেশিকার বদলে এ বার নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিরোধিতা শুরু হয়। ঘেরাও করা হয় উপাচার্যকে। তিনি বাড়ি যাওয়ার পরে, শুক্রবার রাত থেকে অনশন চালাচ্ছেন পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি নিয়ে আচার্যকে রিপোর্টও দিয়েছেন উপাচার্য। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে আছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা কলেজে ভর্তি হতে পারেননি, আমরা তাঁদের পাশে। তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সব পক্ষ বসে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE