Advertisement
০৮ মে ২০২৪

শুধু রাস্তাটুকু পার করবেন, সে জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া ৪০০ টাকা!

রাস্তার এক পারে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অন্য পারে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

এন আর এস হাসপাতাল থেকে এই পথটুকু পেরোতেই মোটা টাকা খরচ করতে হয় রোগীর পরিবারকে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এন আর এস হাসপাতাল থেকে এই পথটুকু পেরোতেই মোটা টাকা খরচ করতে হয় রোগীর পরিবারকে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০২:২৭
Share: Save:

রাস্তার এ পার-ও পার। ব্যবধান ২৫ মিটার। আর দূরত্ব পেরোনোর খরচ ৪০০ টাকা! পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনে দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে।

রাস্তার এক পারে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অন্য পারে একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অভিযোগ, মাঝের এই দূরত্বই এখন রোগীদের পরিবারের কাছে বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জরুরি চিকিৎসায় হাসপাতালে আসা রোগীর পরিবার উপায় না দেখে অনেক সময়ই মোটা টাকা গচ্চা দেওয়ার এই ব্যবস্থা মেনে নেন। যে ভাবে মেনে নিয়েছেন বাদুড়িয়ার বাসিন্দা মাকসুনা বিবির পরিবার।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মাটিতে স্ট্রেচারে শোয়ানো মাকসুনা তখন যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন। বাসের চাকায় পিষ্ট হওয়া তাঁর ডান পা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে। রক্ত ঢাকতে কোনও মতে পায়ে খবরের কাগজ জড়াচ্ছেন পরিজনেরা। মুহূর্তে ভিজে যাচ্ছে সেই কাগজ। মাকসুনার কাছে এক জন পরিচিতকে রেখে পরিবারের অন্যেরা তখন অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য হাসপাতাল চত্বরে ছুটে বেড়াচ্ছেন। রোগীর গন্তব্য রাস্তার উল্টো দিকের ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কারণ হাসপাতালের চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করতে লিখে দিয়েছেন, যা হাসপাতালে হয় না। যেতে হবে সব থেকে কাছের ওই সেন্টারেই।

রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড পার করে রোগীকে ওই সেন্টারে পৌঁছে দিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা দর হাঁকা শুরু করেন ১,০০০ টাকা থেকে। দরাদরির পরেও সেটা ৪০০ টাকার নীচে নামে না। মাকসুনার ছেলে আব্দুল মাজিদকে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বললেন, ‘‘রেট ৮০০ টাকা।’’ সামান্য পরেই ফের বললেন, ‘‘ঠিক আছে ৪০০ টাকা, এর কমে কিছুতেই হবে না।’’ অবাক আব্দুল। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু তো রাস্তাটুকু পার করবেন। এর জন্য ৪০০ টাকা!’’ অ্যাম্বুল্যান্স চালকের জবাব, ‘‘যেতে হলে চলুন। নয়তো অন্য রাস্তা দেখুন!’’

আরও পড়ুন: রেডপান্ডার সংখ্যা জানতে সুমারি

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শহরের অন্যতম এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ফলে রোগীদের ভরসা ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশ। রোগীর পরিজনেদের কথায়, ‘‘অন্য উপায়ও নেই। তাই অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা যে টাকা দাবি করেন, সেটাই দিতে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানালে তাঁরা বলেন, ‘ট্রলিতে করে নিয়ে যান।’ ওই রকম ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে ট্রলিতে রোগী নেওয়া যায়? তা ছাড়া হাসপাতালের ভিতরেই তো ট্রলি পাওয়া যায় না। বাইরে যাওয়ার ট্রলি কোথা থেকে আসবে?’’

আরও পড়ুন: বর্ষণে নষ্ট আলু থেকে আনাজ, লাভ ধানের

হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে পরীক্ষাগুলি হাসপাতালে করানোর ব্যবস্থা নেই, শুধু সেগুলিই ওই সেন্টারে বিনা খরচে করাতে বলা হয়। চিকিৎসকেরা রেফার রিপোর্টে সেই রকমই লিখে দেন। হাসপাতালের তরফে বিল মেটানো হয়।’’ কেন হাসপাতাল কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে না? তাঁর জবাব, ‘‘হাসপাতালের তো একটাই অ্যাম্বুল্যান্স। তা এই কাজের জন্য কী ভাবে দেওয়া যাবে?’’ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স রোগী পরিষেবার কী কী কাজে লাগে? এই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। কেন ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই দায়িত্ব নেয় না? সেন্টারের ম্যানেজার অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘আমাদের তো অ্যাম্বুল্যান্সই নেই।’’

এন আর এসের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় হাসপাতাল চত্বরে এ ভাবে অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবসা আটকাতে না পারার দায় চাপাচ্ছেন পুলিশের উপরে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা পুলিশের দেখার কথা। হাসপাতালে যাতে অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য বহু বার পুলিশকে বলেছি।’’ এলাকাটি এন্টালি থানার অন্তর্গত। সেখানকার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ওখানে নজরদারি চলে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

মাকসুনার ছেলে আব্দুল বলছেন, ‘‘ওই রকম অবস্থায় রোগীকে ফেলে কি বাড়ির লোকদের অভিযোগ করতে যাওয়ার মানসিকতা থাকে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic Rules NRS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE