Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Crime

যাদবপুরে পর পর দু’দিন একই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করল শেখ বিনোদ, পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ

নীলাদ্রি এ দিন বলেন, ‘‘আমি যে থানায় অভিযোগ করেছি তা কোনও ভাবে জানতে পেরে যায় বিনোদ। আমি আজ যখন ওই এলাকায় যাই, তখন সেখানে লাঠি-সোটা নিয়ে হাজির হয় বিনোদের দলবল।”

প্রহৃত নীলাদ্রিশেখর দত্ত (বাঁ দিকে) এবং অভিযুক্ত শেক বিনোদ। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

প্রহৃত নীলাদ্রিশেখর দত্ত (বাঁ দিকে) এবং অভিযুক্ত শেক বিনোদ। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:৫৪
Share: Save:

ভর সন্ধ্যায় কুখ্যাত ডন শেখ বিনোদের ‘দাদাগিরি’ শহরের রাস্তায়। তার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও, এখনও বিনোদের হদিশই পেল না পুলিশ। উল্টে পুলিশে অভিযোগ করার জন্য অভিযোগকারীকে রাস্তায় ফেলে ফের এক বার পেটাল বিনোদের লোকজন! মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার শাসানিও দেওয়া হল। গোটা ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। যাদবপুরের গোবিন্দ ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা বছর পঁচিশের নীলাদ্রিশেখর দত্তের অভিযোগ, ওই সন্ধ্যায় তিনি এক বন্ধুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় জুবিলি পার্কে। সেই সময় কয়েক জন যুবক এসে তাঁদের এক জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু নীলাদ্রিরা সেই ব্যক্তিকে চেনেন না বলায়, ওই যুবকদের সঙ্গে বচসা বাধে। পরে ঘটনা মারধরের চেহারা নেয়। বুধবার নীলাদ্রি বলেন, ‘‘আমরা স্কুটির উপরে বসে ছিলাম। হঠাৎ চার-পাঁচটি ছেলে এসে হাজির হয়। তাদের এক জন মিমো রায়। সে এবং তার সঙ্গীরা আমাদেরকে একটি ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করে। আমরা বলি, ওই নামে কোনও ছেলেকে চিনি না। তাতে ওরা বলে, শেখ বিনোদ খুঁজছে ছেলেটাকে।” নীলাদ্রির অভিযোগ, এর পরেই তাঁর বন্ধু এবং তাঁকে ঘিরে ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে ওই যুবকেরা। তারা নিজেদের শেখ বিনোদের সঙ্গী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল। নীলাদ্রির কথায়, ‘‘আমি প্রতিবাদ করায় ওদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফোনে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নিজেই হাজির হয় শেখ বিনোদ। তার পর আমাকে ব্যাপক মারধর করে ওরা।”

নীলাদ্রির দাবি, এর পর শেখ বিনোদ তার দলবল নিয়ে চলে যায়। ওই রাতেই নীলাদ্রি যাদবপুর থানায় শেখ বিনোদ এবং তার দুই সঙ্গী শেখ ঝন্টু এবং মিমো রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ফের জুবিলি পার্ক এলাকায় গিয়েছিলেন নীলাদ্রি। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘আমি যে থানায় অভিযোগ করেছি তা কোনও ভাবে জানতে পেরে যায় বিনোদ। আমি আজ যখন ওই এলাকায় যাই, তখন সেখানে লাঠি-সোটা নিয়ে হাজির হয় বিনোদের দলবল।” অভিযোগ, এ বার নীলাদ্রিকে তারা শাসায়, কেন তিনি পুলিশে অভিযোগ করেছেন? নীলাদ্রির কথায়, ‘‘কেন আমি পুলিশে অভিযোগ করেছি, তার জন্য রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় আমাকে।”

আরও পড়ুন: জেএনইউ: হস্টেল ফি বৃদ্ধি ৩০ থেকে কমে ১০ গুণ, প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় পড়ুয়ারা

আরও পড়ুন: দিঘার হোটেলে হাত-বাঁধা তরুণীর ঝুলন্ত দেহ! রহস্যভেদ হল চার বছরের শিশুর হাত ধরে

নীলাদ্রি এর পর এম আর বাঙুর হাসপাতালে যান। সেখানে চিকিৎসা করার পর তিনি এ দিন সকালের ঘটনার কথা জানান পুলিশকে। আতঙ্কিত নীলাদ্রি বলেন, ‘‘পুলিশকে জানানোর পরেও ভয় পাওয়া তো দূর অস্ত‌্, উল্টে আমাকে মারধর করে শাসিয়ে গেল! পুলিশ যদি এর পরেও কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে তো বাড়ি থেকে বেরনোই মুশকিল হয়ে যাবে।”

যাদবপুর, টালিগঞ্জের একাংশ-সহ দক্ষিণ শহরতলির এক সময়ের ত্রাস ছিল এই শেখ বিনোদ এবং তার দলবল। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা না পেলে গুলি চালানো, খুনের চেষ্টার মতো একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কলকাতা পুলিশের এসটিএফ এবং গোয়েন্দা বিভাগও একাধিক বার তাকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, সম্প্রতি কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার ‘আশীর্বাদে’ ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে সে।

নীলাদ্রি জানিয়েছেন, এ দিন সন্ধ্যায় যাদবপুর থানার তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে।

যাদবপুর থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নীলাদ্রির অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Jadavpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE