Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নেশামুক্তি কেন্দ্রে যুবকের মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ

অভীকের মা কৃষ্ণা চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ওর দেহে মারের দাগ স্পষ্ট। মরে গিয়েছে বুঝে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছে ওরা।’’

মৃত অভীক চৌধুরীর (বাঁ দিকে) মা ও ভাই (ডান দিকে)। ছবি: সুদীপ ঘোষ

মৃত অভীক চৌধুরীর (বাঁ দিকে) মা ও ভাই (ডান দিকে)। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

প্রথমে মদ্যপান চলত নিজের রোজগারে। কাজ চলে যাওয়ায় কয়েক দিন পরে সেই রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, নেশার টাকার জন্য এর পরে মায়ের উপরে অত্যাচার শুরু করেন ছেলে। মানিকতলার বাসিন্দা সেই নিরুপায় মা প্রতিবেশীদের সাহায্যে গত মঙ্গলবার ছেলেকে ভর্তি করান নিউ ব্যারাকপুরের এক নেশামুক্তি কেন্দ্রে। তবে সেখান থেকে আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি অভীক চৌধুরী (৩৭) নামে সেই যুবকের। তিন দিনের মাথায় শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে।

অভীকের মা কৃষ্ণা চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ওর দেহে মারের দাগ স্পষ্ট। মরে গিয়েছে বুঝে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছে ওরা।’’ ‘এথিক্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে নিউ ব্যারাকপুরের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তা রাজনাথ আমিন বলছেন, ‘‘আমরা মনোরোগীদের ভর্তি নিই না। ওই যুবক নেশাগ্রস্তের পাশাপাশি মানসিক বিকারগ্রস্তও ছিলেন। শুক্রবার রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা মধ্যমগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়না-তদন্ত হলেই সত্যিটা জানা যাবে। পুলিশ তদন্ত করুক। ওঁর মা অকারণ দোষ দিচ্ছেন।’’ মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। শুক্রবার রাতে ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরে সেখানকার দুই কর্মীকেও আটক করেছে পুলিশ।

মানিকতলার মুরারিপুকুর এলাকায় বাড়ি কৃষ্ণাদেবীর। স্বামী বলরাম চৌধুরী মারা গিয়েছেন। ছোট ছেলে প্রতীক আর বড় ছেলে অভীককে নিয়ে থাকতেন তিনি। মধ্যমগ্রামের পাশাপাশি মানিকতলা থানাতেও তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশকে কৃষ্ণাদেবী জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাড়ি অভীককে নিয়ে যায়। ছেলেকে সেখানে রাখতে প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা করে দিতে হবে বলে জানিয়ে দেয় ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র। তবে পরিচারিকার কাজ করা কৃষ্ণাদেবীর পক্ষে একসঙ্গে অত টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। সাড়ে তিন হাজার করে মাসে দু’বার তিনি টাকা দেবেন বলে জানান।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবে অভীককে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই পুরো টাকা চেয়ে কৃষ্ণাদেবীর উপরে চাপ আসছিল বলে অভিযোগ। গত বুধবার তিনি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে তাঁর দাবি। কৃষ্ণাদেবীর কথায়, ‘‘ওদের কম্পিউটারে শুধু অভীকের ছবি দেখাল। দেখলাম, অভীক মেঝেতে শুয়ে রয়েছে। বলা হল, ‘এখানে দিয়েছেন মানে ভাবুন, ছেলেকে কোথাও দূরে পাঠিয়েছেন। অত সহজে দেখা হবে না।’ টাকার ব্যবস্থা করুন।’’ সে দিনই প্রথম কিস্তির টাকা আর ছেলের জন্য বিস্কুট, শ্যাম্পুর মতো রোজকার কিছু সামগ্রী কিনে দিয়ে আসেন কৃষ্ণাদেবী। আজ, শনিবার ছেলের সঙ্গে ফের দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তার আগেই শুক্রবার রাতে অভীকের মৃত্যুর খবর আসে।

রাজ্যের বিভিন্ন নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে প্রায়ই এই ধরনের মৃত্যুর খবর আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেশামুক্তি কেন্দ্রে অত্যাচারের ফলে তাঁদের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে মৃতের পরিবার। পুলিশের পাশাপাশি এ নিয়ে সম্প্রতি তৎপর হয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও। এ নিয়ে তারাও তদন্ত শুরু করেছে। শহরের বেশ কিছু নেশামুক্তি কেন্দ্রে গিয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখে পুলিশকে রিপোর্ট দিতে বলেছে কমিশন। তার মধ্যেই নিউ ব্যারাকপুরের নেশামুক্তি কেন্দ্রে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই কেন্দ্রের প্রধান রাজনাথ অবশ্য দাবি করছেন, ন্যূনতম খরচেই তাঁদের সংস্থায় পরিষেবা পাওয়া যায়। অভীকের যে ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল, তার জন্য টাকা লাগত। তাঁর বক্তব্য, পরিবার ‘সাহায্য’ করেনি বলেই মৃত্যু হয়েছে অভীকের। রাজনাথের আরও দাবি, ‘‘অভীক অন্য কোথাও মারধর খেয়ে এসেছিলেন। ওঁর মায়ের কান্না দেখে আমরা ভর্তি নিয়েছিলাম।’’

কৃষ্ণাদেবী বলছেন, ‘‘আমার ছেলেকে মেরে ফেলে এখন এই সব বলছে? ওদের শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Rehabilitation Center Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE