Advertisement
E-Paper

‘চায়ে পে চর্চা’য় তৃণমূল, কটাক্ষে মুখর বিরোধীরা

এই ‘চায়ে পে চর্চা’ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতি গরম হতে শুরু করেছে। তৃণমূলের ওই কর্মসূচি নিয়ে সমালোচনায় নেমেছে বিরোধীরা। বিজেপির কটাক্ষ, মানুষের মন বুঝতে তাদের অনুকরণ করছে তৃণমূল।

সুশান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৩৪
চা হাতে চলছে আলোচনা। — নিজস্ব চিত্র

চা হাতে চলছে আলোচনা। — নিজস্ব চিত্র

মেঝেতে শতরঞ্চি বিছানো। গোল করে ঘিরে কিছু গ্রামবাসী। চায়ের ভাঁড় থেকে উঠছে ধোঁয়া। গরম চায়ে ফুঁ দিয়ে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সামনে অভিযোগের ঝাঁপি উপুড় করে দিচ্ছেন গ্রামবাসী।সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মানুষের মন বুঝতে নানা পন্থা নিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। চলেছে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। পান্ডুয়ায় এ বার জনসংযোগের কাজে তৃণমূলের নয়া হাতিয়ার ‘চায়ে পে চর্চা’। এই নাম তৃণমূলের দেওয়া নয়। তবে চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ জেনে নেওয়ার কৌশলকে এই আখ্যাই দিচ্ছেন এলাকাবাসীর একাংশ।

এই ‘চায়ে পে চর্চা’ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতি গরম হতে শুরু করেছে। তৃণমূলের ওই কর্মসূচি নিয়ে সমালোচনায় নেমেছে বিরোধীরা। বিজেপির কটাক্ষ, মানুষের মন বুঝতে তাদের অনুকরণ করছে তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এই পন্থা নিয়েছিল। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়েরর পরে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করে তৃণমূল। তার মধ্যেই পান্ডুয়ায় শাসকদল জন সংযোগের নয়া পন্থা নেওয়ায় বিরোধীদের কটাক্ষ — ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে চিঁড়ে ভেজেনি। যদিও শাসক শিবিরের দাবি, মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আগের মতোই নিবিড়। জনসংযোগে পিছিয়ে পড়ে বিরোধীরা কাঁদুনি গাইছে।

কয়েক দিন ধরে পান্ডুয়া ব্লকে তৃণমূলের নেতারা ‘চায়ে পে চর্চা’ শুরু করেছেন। কারও বাড়ির উঠোনে, কারও দাওয়ায় চলছে দরবার। সোমবার বিকেলে যেমন সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতের শ্রীরামবাটি গ্রামের এক বাসিন্দার উঠোনে শতরঞ্চি পাতা হয়েছিল। ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ অসিত চট্টোপাধ্যায়, সভাপতি চম্পা হাজরা, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জীব ঘোষ, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বিরাজেন্দ্র চৌধুরী সেখানে হাজির ছিলেন। মাটির ভাড়ে বার দু’য়েক চা এসেছিল সকলের জন্য। চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে অসিত, চম্পাদের সামনে অনেকেই উগরে দিলেন অভিযোগ।

প্রবীণ বাসিন্দা শিবু হাঁসদার বয়স ষাট পেরিয়েছে। তিনি ব‌লেন, ‘‘বয়সের জ‌ন্য কাজ করতে পারি না। বার্ধক্য ভাতার ব্যবস্থা করা হোক।’’ সোমবাড়ি টুডু জানান, নতুন রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কার্ড হাতে পাননি। শীঘ্রই যেন কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কেউ অভিযোগ করেন, আমপানে মাটির বাড়ি ভাঙলেও ক্ষতিপূরণ জোটেনি। বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবিও ওঠে। অসিতবাবু জানান, এক ঘণ্টার ওই চা-চক্রে গ্রামবাসীদের যাবতীয় সমস্যার কথা লিখে নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হবে। কয়েকজনকে পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে দেখা করতেও বলা হয়।

বিরোধীদের দাবি, ‘চমক’ দিতে চাইছে শাসকদল। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘চায়ে পে চর্চা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চালু করেছেন। বাধ্য ছাত্রের মতো তৃণমূল তাকেই অনুকরণ করছে। তবে বিজেপির কাপে তৃণমূল চা খাবে, সেটা হবে না। তেতো চায়ের মতোই মানুষ ওদের ছুড়ে ফে‌লে দেবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দিদিকে বলো কর্মসূচির মাধ্যমে ওরা রাজনীতি করার চেষ্টা করেছিল। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখন নতুন রাস্তা খুঁজছে।’’ পান্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের মন্তব্য, ‘‘তৃণমুল যতই চায়ের আড্ডা বসাক, কিচ্ছু হবে না! পঞ্চায়েত ভোটে ওরা গায়ের জোরে জিতেছে। সব ভোটে গায়ের জোর খাটবে না। ওদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির জবাব মানুষ ভোটের বাক্সেই দেবেন।’’অসিতবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা সারা বছর ধরেই মানুষের পাশে থাকি। মানুষের কথা শুনতে গ্রামে যাচ্ছি বলে বিরোধীরা ভয় পাচ্ছে। ওরা কুৎসা করুক। আমরা মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি।’’ তাঁর সংযোজ‌ন, ‘‘চা খেতে খেতে কথা বললে সেটা কাউকে অনুকরণ করা হয় না। এটা বিজেপির রাজনৈতিক দৈন্যের পরিচয়।’’

Chai Pe Charcha TMC BjP Pandua
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy