হলদিয়ায় পা দিয়েই শুরু হল মিষ্টিমুখ। নিজস্ব চিত্র
প্রায় দু’দশক পরে বন্ধুর সঙ্গে দেখা। তাঁকে দেখে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘‘সব ঠিক আছে তো?’’ তার পরেই বন্ধুর আনা মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটি মিষ্টি তুলে তারিয়ে তারিয়ে খেলেন মধ্যবয়স্ক ওই ব্যক্তি। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে নববর্ষে জাপান থেকে হলদিয়ায় চলে এসেছেন তিনি।
পেশায় প্রযুক্তিবিদ জাপানের নাগরিক কেনটারো মোকাশান ১৯৯৯ সালে কর্মসূত্রে শিল্প-বন্দর শহর হলদিয়ায় এসেছিলেন। বছর খানেক ছিলেন এখানে। সে সময়ই আলাপ হয় এলাকার বাঙালির সঙ্গে। বন্ধুত্ব হয় গাঢ়। পরে জাপানে ফিরে গেলেও যোগাযোগটা থেকেই গিয়েছে। এত বছর পরে এবার বন্ধুদের সঙ্গে নববর্ষ কাটাতে তাঁদের না জানিয়েই হাজির হয়েছেন তিনি।
মোকাশানের জানাচ্ছেন, ওই সময় শতাধিক জাপানি কর্মসূত্রে হলদিয়ায় থাকতেন। তাঁদের জন্য তৈরি হয়েছিল ‘সাটাকু’ কলোনি। ‘সাটাকু’ কথার অর্থ ‘শান্তির নীড়’। বাঙালিরদেরও মাঝেও ছোটখাটো জাপানে পরিণত হয়েছিল ‘সাটাকু’। আর তাঁদের সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটেছিল বাঙালি সংস্কৃতির। পরে অন্যদের মতোই নিজের দেশে ফিরে গিয়েছিলেন মোকাশান। ‘সাটাকু’ও এখন ফাঁকা। কিন্তু হলদিয়ার স্মৃতি রয়েছে গিয়েছে তাঁদের মনের কোঠায়।
মোকাশান বলেন, ‘‘ওই সময় অনেক বাঙালির সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল। জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় এঁদের সঙ্গে কাটিয়েছি। তাই আগাম খবর না দিয়েই চলে এলাম নতুন বছরে। কেমন আছে হলদিয়া— তা দেখার জন্যও মন কেমন করছিল।’’ বন্ধু মানস বসুর বাড়িতে উঠেছেন মোকাশান। তবে নতুন বছরে একাধিক বন্ধুর বাড়িতে বাঙালি খাবারের নেমন্তন্ন রয়েছে তাঁর। মোকাশানের এক বন্ধু শান্তনু দিন্দা বলেন, ‘‘কত বছর আগে এক সঙ্গে কাজ করেছিলাম। ও জাপানি হয়েও বাঙালির আচার ব্যবহার দ্রুত রপ্ত করেছিল। এতদিন পর দেখা করতে আসবে, ভাবিনি।’’
নববর্ষে জাপানে তো বড় উৎসব হয়, সে সব ছেড়ে এই সময় ভারতের এই ছোট্ট শহরে থাকতে ভাল লাগছে? জবাবে মোকাশান বলেন, ‘‘আমাদের দেশে নতুন বছরের উদযাপন খুব ধুমধাম করে হয়। ওখানে পারদ বেশ কিছু জায়গায় হিমাঙ্কের নীচে নেমেছে। তার তুলনায় হলদিয়ার আবহাওয়া অনেক মনোরম। এখানে নতুন বছর উদযাপন দেখলাম। নদীর ধারে সবাই মিলে পিকনিকের মজাই আলাদা।’’
এত আনন্দের পরেও একটা ছোট্ট আক্ষেপ থেকে গেল মোকাশানের। হলদি নদীর তীরে কল্পতরু উৎসবে যোগ দিয়ে তাঁর আফশোস, ‘‘ভাল ইলিশটা খাওয়া হল না।’’ তা শুনে তাঁর বন্ধুদের জবাব, ‘‘ভায়া, পরের বার বর্ষায় চলে এসো। প্রাণভরে তোমায় খাওয়াব ইলিশ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy